"গল্পটা আমার ছোটদির (বর্তমান পরিস্থিতির একজন প্রকৃত যোদ্ধার)" পার্ট-২

in Praise India3 years ago

যার গলায় মোবাইল নেই ওটা আমার ছোটদি -
IMG_20210502_233428.jpg

প্রিয়,
পাঠকগণ,

আশাকরি সকলে সাবধানে আছেন।

আমার লেখা কালকের পোষ্টটা যাঁরা পড়েছেন, অসংখ্য ধন্যবাদ তাদের। কথা দিয়েছিলাম যেখানে শেষ করেছি,সেখান থেকেই শুরু করবো।

তাই আজ আবার আমাদের গল্প শুরু করছি।বড়দির বিয়ের পর আমাদের সকলের দিন ভালোই কাটছিল। এরপর দিদির জীবনে বেশ চড়াই উৎরাই গেছে।ভালোবাসা,ভালোলাগা, কষ্ট,আনন্দ সব নিয়ে।ছোটদি আজও বলে মা না থাকলে ও কিছুতেই ওই সময় সামলে উঠতে পারত না।

আমার বড়দি একদমই ছবি তুলতে পছন্দ করে না। এটা ওর বিয়ের পরপরই তোলা। সাথে ছোটদি-
IMG_20210502_234029.jpg

"মা"একটা অক্ষর হলেও তাঁর ক্ষমতা অপরিসীম। এটা আমরা প্রত্যেকে মানি। আর "সময় " এর থেকে বড় ওষুধ বোধহয় জীবনে আর কিছু হয় না।জীবনের এমন অনেক কষ্ট আছে, যা সময়ের সাথে সাথেই কম হয়।যাইহোক,সময়ের ব্যবধানে, আর ধৈর্য্য কারনে ছোটদির জীবনে এলো তার প্রকৃত ভালোবাসার মানুষ। কথা বলছি দিদির husband প্রশান্ত দার।

ভীষণ ভালো মানুষ, সৎ,শান্ত,ধৈর্যশীল,স্বল্পভাষী,
মিশুকে,পরিশ্রমী। একজন আর্মি অফিসার।দুজনের সম্পর্কের শুরুটা বেশ অদ্ভুত।দাদার বন্ধু, আর দিদির বান্ধবী দুজনের সম্পর্ক ছিলো, সেই দুজন মিলে দাদা - দিদির সম্পর্কের সূচনা করে।যদিও তারা উপলক্ষ মাত্র, সবটাই উপরে বসে থাকা একজনের পূর্ব পরিকল্পিত।

দাদা (দিদির husband)
IMG20200112165338.jpg

২০১০ সালে বিয়ে হলো ছোটদির। আমার মনে পড়ে অনেক দায়িত্ব নিয়ে দিদির বিয়ের আসর সাজিয়েছিলাম আমি,ঝুনুদি, আর আমার ছোটো মামা। দারুণ হয়েছিল,ছোটদিরও খুব ভালো লেগেছিল। দিদির বিয়ের পর আমি একা হয়ে গেলাম।

দিদির বিয়ের আসর -
IMG_20210503_211059.jpg

IMG_20210503_211033.jpg

সবাথেকে খারাপ লাগার বিষয়,দিদির বিয়ের পর মায়ের শরীরটা খারাপ হতে শুরু করে, আর এক বছরের মধ্যে সবটা শেষ। তবুও দিদি যথা সাধ্য চেষ্টা করেছিল,এমনকি কোনো কিছু ঠিক হবে না জেনেও মাকে ভেলোর পাঠিয়েছিল, কারণ মা বিশ্বাস করত ভেলোর গেলে মা ভালো হয়ে যাবে। আমার মনে হয় এমন ছেলেও খুব কম আছে, যাঁরা জেনে শুনে মায়ের জন্য এটা করবে, যেটা দিদি মেয়ে হয়ে তখন করেছিল।

মায়ের মৃত্যুর পর আমিও দিদির সাথে থাকতে শুর করি, চাকরির জন্য ওকে বাড়ি ভাড়া নিয়ে কলকাতাতেই থাকতে হত। তখন ছোটদি খুব লড়াই করেছে একটা বাচ্চার জন্য। দিদির পাশে থাকার চেষ্টা আমি বরাবর করেছি। অনেক অনেক চেষ্টা ও কষ্টের পর তিতলী এলো আমাদের জীবনে।জীবনটা বদলে গেল দিদির। মা ফিরেছে ওর মেয়ে রূপে সেটাই মানি আমরা সকলে। কেন জানেন তিতলী ও খুব মিষ্টি পছন্দ করে 😁। এরপর তাতান এলো। দিদির পরিবার পূর্ণ হলো।
IMG_20210502_234715.jpg

ইতিমধ্যে আমার বিয়ে হয়ে গেছে,শুভকে আমিই পছন্দ করেছি, তবে মায়ের মত দায়িত্ব নিয়ে বিয়েটা ছোটদি দিয়েছে। সব কিছু করেছে একা হাতে। দাদার তখন কাশ্মীর পোস্টিং ছিল। ভীষণ কষ্ট করে আমার বিয়েতে এসেছিল দাদা। অনেক অনেক ঋণ এই দুটো মানুষের কাছে আমার। যা এই জীবনে পরিশোধ করা হবে না
IMG_20210502_234140.jpg

এবার আসি আসল কথায়, আমরা সকলে আজ যে পরিস্থিতিতে দাড়িয়ে আছি। তাতে আমাদের সকলের বাইরে বেরোতে ভয় করে। অথচ দিদিরা কিন্তু ভয় পায়না।প্রতিদিন মৃত্যুর কোলে ঢোলে পরা মানুষ গুলোকে বাঁচানোর লড়াই করে নির্ভয়ে। নিজের পরিবার, ছোটো ছোটো বাচ্চাদের থেকে দূরে থাকে মাসের পর মাস। বাড়ি ফিরলে এই ভয়ংকর রোগটা ওদের পরিবারকেও ছাড়বে না এই ভয়ে শুধু ফোনের মাধ্যমে বাচ্চাদের দেখে,ওদের গলা শোনে। এটা যে ওর জন্য কত কষ্টের যাঁরা মা হয়েছেন নিশ্চয় বুঝবেন। আর মাকে ছেড়ে বাচ্চারা কেমন থাকতে পারে সেটা নয় আলাদা করে নাই বললাম
IMG_20210502_233256.jpg

অনেকই বলে তাহলে চাকরী করার দরকার কি???? এই প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই, যদি আপনাদের জানা থাকে জানাবেন। অনেকই বলে সরকারি নার্সদের মন বলতে কিছু নেই, কি বাজে ব্যবহার?
আচ্ছা ওদের জায়গায় আপনি হলে কি করতেন, চোঁখের সামনে প্রতিদিন মানুষগুলোকে মরতে দেখছে, দিনের পর দিন পরিবার থেকে দূরে থাকছে,দিন রাত জেগে কাজ করছে। এরপরও যদি রোগীর পরিবার এসে ওদের গালাগালি করে, মারতে যায়।
আপনি হলে পারতেন ধৈর্য্য ধরতে?

জানিনা পারতেন কিনা। তবে যাঁরা এমন বলে তাদের সংখ্যা কিন্তু নেহাৎ কম নয়। তবে ওই যে কথায় আছে সবকিছুর ভালোমন্দ দুদিক হয়। এমনও অনেক মানুষ আছে যারা নার্সদের দ্বিতীয় ডক্টর বলে মানেন।তাদের জন্যই দিদিদের কষ্টটা কষ্ট মনে হয়না।

এখন পি.পি.ই ড্রেসের কথা সবাই শুনি, অনেকে অনেক ভাইরাল ভিডিও দেখেছেন। ওটা পড়ে ১০ মিনিট থাকাও যেকোনো মানুষের জন্য কষ্টের অথচ আমাদের জন্য নির্দ্বিধায় ওরা পরে নেয় ৭-৮ ঘন্টার জন্য। দিদিকে দেখে অন্য কোনোদিন না হলেও এদিন প্রণাম করতে ইচ্ছে হয়েছিল -

পি. পি. ই খুলেছে মাত্র। পুরো ড্রেস ভেজা -
IMG_20210502_233447.jpg

লেখাটা শেষ করবো কিভাবে বুঝতে পারছি না। হয়ত দিদির অনেক স্বপ্নপূরণ হয়নি, আমিও তেমন কিছু করতে পারিনি যেমনটা দিদি চেয়েছিল। তবে দিদি পেরেছে, মায়ের স্বপ্ন, বাবার আশা,দিদি আকাঙ্খা, আর বোনের আবদার মেটাতে। স্ত্রী হয়ে দাদার সাথে থেকেছে, মা হয়ে বাচ্চাদের ভালোবেসেছে আর সর্বপরি নার্স হয়ে অসংখ্য মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে।মানুষ হয়ে জন্ম নিয়ে এক জীবনে এর থেকে বেশী সত্যিই কি কিছু করনীয় থাকে আমাদের?

ভালো থাক ছোটদি, সুস্থ থাক,বেচেঁ থাক আর ও বহু বছর মাথার উপর বটগাছ হয়ে। ভালোবাসি তোকে।

আপনাদেরও অসংখ্য ধন্যবাদ আমার পোষ্টটা পড়ার জন্য। ভালো থাকুন আপনারা, ভালো রাখুন ওদের যাঁরা আপনাদের জন্য লড়াই করছে। নিজেরা সাবধানে থেকে ওদের সাহায্য করুন এই মহামারি থামাতে।শুভরাত্রি