এই একঘেয়ে বৃষ্টির মাঝে এখন বেরোই কি করে? ওদের ঝগড়া থামার প্রায় সাথে সাথে বৃষ্টি শুরু হলো রাতে। তা টের পেলেও এতো জোর বৃষ্টির আভাস পাইনি। এখন ঘড়ির কাটা সাতটার ঘর ছুঁই ছুঁই করছে। এখনো থামার কোন জো নেই। গায়ের চাদরটি সরিয়ে বিছানা ছেড়ে দাঁড়াতেই কেমন যেনো কেঁপে উঠলো শরীরটা। সারারাত না ঘুমোলে এমনই হয়! মনে মনে অভিসম্পাত দিলাম ঝগড়াটে দম্পতিকে। হতভাগার দল! বিয়ে করবি, গন্ডায় গন্ডায় ডিম পাড়বি, আবার ঝগড়াও করবি সারা রাত ধরে!
ডিম ভাজি আর টোষ্ট সাজিয়ে রেখেছিল বুয়া টেবিলে।খেয়ে কাপড় চোপড় পরে যখন বাইরে বেরিয়ে এলাম, তখনো কিছুটা কমেছে বৃষ্টি। কিন্তু জল আর কাঁদায় থকথকে রাস্তা। পাশের ড্রেন থেকেও উপচে পড়ছে পানি। এমনি এক দিনে রিক্সাওয়ালাদেরও পোয়া বারো! কোথাও যেতে চায়না। এমনকি কথা বলতেও যেনো কষ্ট হয় ওদের! যেতে রাজী হলেও আকাশচুম্বী দাম হেঁকে বসে। মাঝে মাঝে মনে হয় একটা থাপ্পড় লাগিয়ে দিই গালে।
যা ভেবেছিলাম, তা ই হলো। পাঁচজন রিক্সাওয়ালা জুবুথুবু হয়ে বসেছিল হুডের আড়ালে।যাওয়া তো দূরের কথা, আমাকে পাত্তাই দিলনা। খুব কষ্টে যেনো মাথা নাড়লো। মেজাজ আরো খারাপ হলো আরো। কষিয়ে একজনকে চড় লাগাতে যাচ্ছিলাম প্রায়, দেখি একটু দূরে দাড়িয়ে আছে একটি। মেজাজ সামলে সেদিকে এগিয়ে গেলাম। রিক্সাওয়ালা চালকের আসনে বসে আমাকে দেখেই একটি গামছা দিয়ে পেছনে ঝুঁকে আরোহীর সিটটি মুছে দিল। কোন কথা না বলে উঠে বসলাম সেখানে। তারপর গন্তব্যস্থল বললাম। দরদাম ঠিক না করেই সে প্যাডেলে চাপ দিল রিক্সাওয়ালা।
বড় রাস্তার মোড়ে এসেই দেখি চারদিক থৈথৈ করছে জলে। হাটু অবধি পানিতে ডুবে আছে রাস্তা। এরই মাঝে জল ছিটিয়ে চলছে যানবাহন। আমার রিক্সাটিও সে জলের মাঝে নেমে গেলো। নোংরা ছিটে যাতে গায়ে না লাগে, সেজন্যে পলিথিনের কভারটি ভালো করে জড়িয়ে নিলাম শরীরে। কিন্তু সেটির গায়েও লেগে আছে কাঁদা। হাত দিতেই গা ঘিন ঘিন করে। মনে মনে অভিসম্পাত দিলাম রিক্সাওয়ালা শ্রেনীর এই জীবগুলোকে। একটু পরিস্কার রাখলে কি ক্ষতি হয় ওদের! এরই মাঝে একটি বাস আমাদেরকে ভিজিয়ে চলে গেলো পাশ ঘেসে। পলিথিনে নিজেকে কিছুটা বাঁচাতে পারলেও রিক্সাওয়ালা পুরো ভিজে গেলো। সেদিকে তাকিয়ে বিশ্রী এক গালি দিয়ে কোমর থেকে গামছাটি খুলে মাথা আর মুখ মুছে নিল সে। তারপর আবার চাপ দিল প্যাডেলে।
শান্তিনগরের মোড়ে দেখি আরো গভীর জল। গাড়ীগুলো কোনভাবে চলতে পারলেও, রিক্সাওয়ালারা নেমে টানতে বাধ্য হলো। কিন্তু আমার রিক্সাওয়ালা নামলো না। সে তার সিটে বসেই জলের সাথে চালিয়ে গেলো যুদ্ধ। ঘড়ির দিকে তাকালাম। এভাবে শামুকের গতিতে চললে নির্ঘাত দেরী হয়ে যাবে মিটিংএ! বললাম, „নবাবের মতো না বসে বসে, একটু নেমে টানো না মিয়া“! রিক্সাওয়ালা মাথা ঘুরিয়ে কঠিন, বিরস চেহারায় আমার দিকে তাকালো একবার। তারপর কিছু না বলে আপ্রানে প্যাডেলে চাপ দিতে শুরু করলো। তাতে গতি অতি সামান্য বাড়লেও আমি আর কিছু বলার সাহস পেলাম না। এখানেই যদি নামিয়ে দেয়, তখনো আরো বেশী ঝক্কি!
অবশেষে কাকড়াইলের মোড়ে অফিসের সামনে এসে থামলো রিক্সা। রাস্তায় জল থাকলেও লাফিয়ে অফিসের সিঁড়িতে উঠতে পারলাম। রিক্সাওয়ালা কপালের ঘাম মুখে রিক্সা থেকে নেমে আমার দিকে এগিয়ে এলো ভাড়া আদায়ের জন্যে। তার আসার ভঙ্গীতেই একটি বিষয় টের পেয়ে নিজেই যেনো স্থবির হয়ে গেলাম। তার ডান পায়ে পাতাটি নেই, গোড়া থেকেই কাটা!এক পায়েই এই জলের মাঝে চালিয়ে এনেছে রিক্সা!
ভাড়া মিটিয়ে দেবার পর খোঁড়াতে খোঁড়াতে রিক্সাওয়ালা এগিয়ে গেলো তার রিক্সার দিকে। সীটে উঠে প্যাডেল চেপে আবার নেমে গেলো রাস্তার জলের মাঝে। সেদিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ঢুকলাম অফিসে।মিটিংএ পৌঁছাতে মিনিট পাঁচেক দেরী হলেও কোন অসুবিধা হলোনা। শুনলাম, বস নিজেই কোথাও আটকে আছেন গাড়ীতে। জলের কারণে নাকি দেরী হচ্ছে এগুতে। অপেক্ষা করতে করতে বেশ ভার ভার মনে হলো ভেতরটা। রিক্সাওয়ার কারণে? কি জানি! হতে পারে বা নাও পারে! এমনি এক বৃষ্টিভেজা দিনে অকারণেই বিষন্ন থাকে মন!
Warning! This user is on my black list, likely as a known plagiarist, spammer or ID thief. Please be cautious with this post!
To get off this list, please chat with us in the #steemitabuse-appeals channel in steemit.chat.
This post has received a 0.35 % upvote from @drotto thanks to: @akazad.
This post has received a 0.05 % upvote from @speedvoter thanks to: @akazad.
thanks