মুহাম্মদ ( স: ) সম্পর্কে কয়েকজন বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব

in #life6 years ago

মুহাম্মদ ( স: ) সম্পর্কে এখানে উল্লেখিত বিভিন্ন মনিষীর উদ্ধৃতিগুলো একটি ওয়েবসাইটে পেয়েছি। সেখান থেকে আপনাদের জন্য বাংলায় অনুবাদ করে দিলাম। অনুবাদে ভূল হওয়া স্বাভাবিক এবং তার জন্যে আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। উদ্ধৃতিগুলো কোন্ বই থেকে নেয়া হয়েছে তা উল্লেখ করা আছে।

islam-religion-of-peace.jpg

Sir George Bernard Shaw in 'The Genuine Islam,' Vol. 1, No. 8, 1936.

মুহাম্মদের ধর্মের প্রতি আমি সবসময় সুউচ্চ ধারণা পোষণ করি কারণ এর চমৎকার প্রাণবন্ততা। আমার কাছে মনে হয় এটাই একমাত্র ধর্ম যেটা সদা পরিবর্তনশীল জীবনযাত্রার সাথে অঙ্গীভূত হওয়ার ক্ষমতা রাখে যা প্রত্যেক যুগেই মানুষের হৃদয়ে আবেদন রাখতে সক্ষম। আমি তাঁর(মুহাম্মদ) সম্বন্ধে পড়াশোনা করেছি-- চমৎকার একজন মানুষ এবং আমার মতে খ্রিস্টবিরোধী হওয়া সত্বেও তাঁকে অবশ্যই মানবতার ত্রাণকর্তা বলতে হবে।

আমি বিশ্বাস করি তাঁর মতো ব্যক্তির নিকট যদি আধুনিক বিশ্বের একনায়কতন্ত্র অর্পণ করা হতো তবে এর সমস্যাগুলো তিনি এমনভাবে সফলতার সাথে সমাধান করতেন যা বহু প্রতিক্ষীত শান্তি ও সুখ আনয়ন করতো। আমি ভবিষ্যতবাণী করছি যে মুহাম্মদের ধর্মবিশ্বাস আগামীদিনের ইউরোপের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, যা ইতিমধ্যে বর্তমান ইউরোপে গ্রহণযোগ্যতা পেতে আরম্ভ করেছে।

Thomas Carlyle in 'Heroes and Hero Worship and the Heroic in History,' 1840

এ লোকটিকে (মুহাম্মদ) ঘিরে যে মিথ্যাগুলো (পশ্চিমা অপবাদ) পূন্জীভূত হয়ে আছে- যার ভালো অর্থ হতে পারে ধর্মান্ধতা, তা আমাদের নিজেদের জন্যই লজ্জাজনক।

Mahatma Gandhi, statement published in 'Young India,'1924.

আমি জীবনগুলোর মধ্যে সেরা একজনের জীবন সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলাম যিনি আজ লক্ষ কোটি মানুষের হৃদয়ে অবিতর্কিতভাবে স্থান নিয়ে আছেন.......যেকোন সময়ের চেয়ে আমি বেশী নিশ্চিত যে ইসলাম তরবারির মাধ্যমে সেইসব দিনগুলোতে মানুষের জীবন-ধারণ পদ্ধতিতে স্থান করে নেয়নি। ইসলামের প্রসারের কারণ হিসেবে কাজ করেছে নবীর দৃঢ় সরলতা, নিজেকে মূল্যহীন প্রতিভাত করা, ভবিষ্যতের ব্যাপারে সতর্ক ভাবনা, বন্ধু ও অনুসারীদের জন্য নিজেকে চরমভাবে উৎসর্গ করা, তাঁর অটল সাহস, ভয়হীনতা, ঈশ্বর এবং তাঁর(নবীর) ওপর অর্পিত দায়িত্বে অসীম বিশ্বাস। এ সব-ই মুসলমানদেরকে সকল বাঁধা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছে। যখন আমি মুহাম্মদের জীবনীর ২য় খন্ড বন্ধ করলাম তখন আমি খুব দু:খিত ছিলাম যে এই মহান মানুষটি সম্পর্কে আমার পড়ার আর কিছু বাকি থাকলো না।

Dr. William Draper in 'History of Intellectual Development of Europe'

জাস্টিনিয়ানের মৃত্যুর চার বছর পর, ৫৬৯ খ্রিস্টাব্দে আরবে একজন মানুষ জন্মগ্রহণ করেন যিনি সকলের চাইতে মানবজাতির ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করেছিলেন....অনেক সাম্রাজ্যের ধর্মীয় প্রধান হওয়া, মানবজাতির এক তৃতীয়াংশের প্রাত্যহিক জীবনের পথনির্দেশক হিসেবে কাজ করা-- এসবকিছুই সৃষ্টিকর্তার দূত হিসেবে তাঁর উপাধির যথার্থতা প্রমাণ করে।

Alphonse de LaMartaine in 'Historie de la Turquie,' Paris, 1854.

উদ্দেশ্যের মহত্ব, লক্ষ্য অর্জনের উপায়সমূহের ক্ষুদ্রতা এবং আশ্চর্যজনক ফলাফল যদি অসাধারণ মানুষের তিনটি বৈশিষ্ট্য হয় তবে কে মুহাম্মদের সাথে ইতিহাসের অন্য কোন মহামানবের তুলনা করতে সাহস করবে ? বেশীরভাগ বিখ্যাত ব্যক্তি শুধুমাত্র সেনাবাহিনী, আইন এবং সাম্রাজ্য তৈরী করেছেন। তাঁরা যদি কিছু প্রতিষ্ঠা করে থাকেন সেটা কিছুতেই জাগতিক ক্ষমতার চাইতে বেশি কিছু নয় যা প্রায়ই তাদের চোখের সামনে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এই মানুষটি শুধুমাত্র সেনাবাহিনী, আইন, সাম্রাজ্য, শাসক, লোকবল-ই পরিচালনা করেননি সেইসাথে তৎকালীন বিশ্বের লক্ষ-লক্ষ মানুষের জীবনকে আন্দোলিত করেছিলেন; সবচেয়ে বড় কথা হলো তিনি দেব-দেবী, ধর্মসমূহ, ধারণাগুলো, বিশ্বাসসমূহ এবং আত্মাগুলোকে আন্দোলিত করেছিলেন।

দার্শনিক, বাগ্মী, বার্তাবাহক, আইনপ্রণেতা, নতুন ধারণার উদ্ভাবনকারী/ধারণাকে বাস্তবে রূপদানকারী, বাস্তব বিশ্বাসের পুনরুদ্ধারকারী.....বিশটি জাগতিক এবং একটি আধ্যাত্মিক সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা-এই হলো মুহাম্মদ। মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব পরিমাপের যত মাপকাঠি আছে তার ভিত্তিতে বিবেচনা করলে আমরা নিজেদেরকে প্রশ্ন করতে পারি- মুহাম্মদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ কেউ আছে কি ?

Michael H. Hart in 'The 100, A Ranking of the Most Influential Persons In History,' New York, 1978. মুহাম্মদকে সর্বকালের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তালিকায় শীর্ষস্থান দেয়াটা অনেক পাঠককে আশ্চর্যান্বিত করতে পারে এবং অন্যদের মনে প্রশ্নের উদ্রেক হতে পারে, কিন্তু ইতিহাসে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি সেকুলার এবং ধর্মীয় উভয় পর্যায়ে সর্বোচ্চ পরিমাণ সফল ছিলেন। সম্ভবত ইসলামের ওপর মুহাম্মদের তুলনামূলক প্রভাব খ্রিস্টান ধর্মের ওপর যীশু ও সেইন্ট পলের সম্মিলিত প্রভাবের চেয়ে বেশী।.... আমি মনে করি, ধর্মীয় ও সেকুলার উভয়ক্ষেত্রে প্রভাবের এই বিরল সমন্বয় যোগ্য ব্যাক্তি হিসেবেই মুহাম্মদকে মানবেতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী একক ব্যক্তিত্ব হিসেবে আবির্ভুত করেছে।

W. Montgomery Watt in 'Muhammad at Mecca,' Oxford, 1953.

নিজ আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য সকল প্রকার কষ্ট সহ্য করা, তাঁকে যারা বিশ্বাস করতো এবং নেতা হিসেবে অনুসরণ করতো তাদের সুউচ্চ চারিত্রিক গুণাবলি, এবং মুহাম্মদের অর্জনের বিশালত্ব- এ সবকিছুই তাঁর সততার সাক্ষ্য দেয়। মনে করুন মুহাম্মদ একজন অসাধু ব্যাক্তি যিনি সমাধানের চেয়ে সমস্যাই বেশী সৃষ্টি করেছেন। অধিকন্তু, আর কোন ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বই মুহাম্মদের মতো পাশ্চাত্যে এতবেশী অবমূল্যায়িত হয়নি......শুধুমাত্র যা বর্ণিত হয়েছে তার ভিত্তিতে নয়, আমরা যদি মুহাম্মদকে সামান্য পরিমাণও বুঝতে চাই তবে অবশ্যই প্রয়োজনীয় সততা ও ন্যায়পরায়ণতা সহকারে তাঁকে বিচার করতে হবে। আমরা যদি আমাদের অতীত থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত ভূলগুলো সংশোধন করতে চাই তবে এটা ভূলে গেলে চলবে না যে চুড়ান্ত প্রমাণ আপাতদৃষ্টিতে যা সত্য বলে প্রতীয়মান হয় তারচেয়ে অনেক কঠিন শর্ত। এবং এই ব্যাপারে প্রমাণ অর্জন সত্যিই দু:সাধ্য হবে।

Sort:  

পৃথিবীর বুকে একটি নাম মুহাম্মদ (সঃ) এবং যে নামের প্রতি কেয়ামত পর্যন্ত কোটি কোটি মানুষের ভালোবাসা বহমান থাকবে। আল্লাহ আপনি আমাদেরকে আপনার পরম বন্ধুর যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে কবুল করুন। তার দেখানো পথে আমাদেরকে চলার তাওফিক দিন। আমিন।