জীবন ডায়েরীর পাতা থেকে..... ০৩। অচেনা রংঙিন ঢাকাতে অসহায় আমি

in #lifestory6 years ago (edited)

পূর্ব প্রকাশের পর:

অচেনা রংঙিন ঢাকাতে অসহায় আমি.......

প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে দেখি ৪০০/- টাকাই আছে। তার মানে ঐ মুখোশধারী লোকটা আমার পাঞ্জাবির পকেটে যা পেয়েছে সেটাই নিজের হস্তগত করেছে। দুপুর পর্যন্ত তার অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু তার আর দেখা মিলল না। নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছিল। কোথায় যাব আমি, এত বড় ঢাকা শহরের কিছুই তো আমি চিনি না। হাটতে হাটতে বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ে আসলাম। দূড় থেকে দেখলাম অনেক বড় একটা ব্রীজ। বুড়িগঙ্গা ব্রীজের নাম শুনেছি, মনে মনে ভাবলাম হয়ত ওটাই সেই বুড়িগঙ্গা ব্রীজই হবে। সেই ছোট্রবেলায় মাত্র পাঁচ বছর বয়সে মায়ের সাথে একবার ঢাকা আসার সুযোগ হয়েছিল। আমার মা তখন পিটিআই থেকে টিচার্স ট্রেনিংয়ে সমগ্র বাংলাদেশ থেকে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছিলেন এবং ঢাকাতে তার সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হয়েছিল। তখন এসছিলাম এই ঢাকাতে এবং তাও মাত্র একদিনের জন্য।

নৌকায় উঠে বসলাম সদরঘাট আসার জন্য। এপাড়ে আসার পরে রাস্তায় গন্তব্যহীনভাবে হাটা শুরু করলাম। কিছুক্ষণ হাটার পরে পৌছলাম সদরঘাট পোষ্ট অফিসের কাছে। সেখানে ফুটওভার ব্রীজের উপরে উঠে একটু বসলাম। সারাদিনে পেটে কিছুই পরেনি। ক্ষুধায় পেটটা চো চো করছে। কিছুক্ষণ পরে ব্রীজের উপর থেকে একটা হোটেল চোখে পড়ল। কিন্তু খেতে যেতে সাহস হল না। কারণ সম্বল মাত্র চারশত টাকা। এই টাকা খরচ করে ফেললে পরবর্তীতে কিভাবে চলব। নানা চিন্তা ভাবনা অগোছালো ভাবে মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল। সন্ধা নেমে এল এবং রংঙিন নিয়ন লাইটের আলোতে অচেনা শহরটাকে আরও অচেনা লাগছিল, মনের মধ্যে একটা অজানা ভয় এসে গেল। কোথায় যাব, কি করব, আমার ভবিষ্যৎ কি হবে ইত্যাদি নানা রকম চিন্তা মাথায় আসতে শুরু করল। ক্ষুধায় এবং পিপাসায় খুব কাতর হয়ে গেলাম। অবশেষে ফুটওভার ব্রীজ থেকে নেমে হাটতে হাটতে সেই হোটেলটির কাছে গেলাম। ১০০ টাকা ভাংগিয়ে ১০ টাকা দিয়ে দুটি পুরি কিনে খেলাম, এর পরে পেটভরে পানি খেলাম। পেটটা মোটামুটি শান্ত হল। কিন্তু ক্লান্তিতে চোখে ঘুম আসতে শুরু করল। কিন্তু ঘুমাব কোথায়। রাত তখন আনুমানিক 8/৯ টা হবে। আবার সেই ফুটওভার ব্রীজের উপরে উঠলাম। দেখি সেখানে অনেক পথশিশু ব্রীজের উপরে ঘুমানোর বন্দোবস্ত করতেছে। আমিও তাদের একপাশে শুয়ে পরলাম, এবং সারাদিনের ক্লান্তিতে কখন যে চোখদুটো বুজে গেছে টেরও পাইনি।

হঠাৎ ঘুম ভেংগে গেল, দেখি একটি নেশাগ্রস্থ লোক আমার পকেট হাতরাচ্ছে। ধমক দিলাম, সে নেশাগ্রস্থ কন্ঠে জিগ্যেস করল ভাই ম্যাচ আছে? আমি তাকে না বলায় সে কিছুক্ষণ পরে চলে গেল। হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ায় মেজাজটা খুব খারাপ হয়ে গেল। লক্ষ্য করে দেখলাম পাশে থাকা পথশিশুরা মুখ টিপে হাসছে। হাসার কারণ তাদের জিগ্যেস করায় তারা বল্ল আমার পকেট থেকে কিছুক্ষন আগে নাকি একটা লোক কি যেন নিয়ে দৌড়ে পালিয়েছে। কথা শুনেই পকেটে হাত দিলাম দেখি আমি সর্বশান্ত প্রায়। মানে পকেটে মাত্র দশটি টাকা আছে বাকি টাকা পকেট মার নিয়ে গেছে। খুব কান্না পাচ্ছিল, কিন্তু লজ্জায় আর কাদতে পরলাম না। মনে পড়ল আমার এক দুঃসম্পর্কের আত্মীয় মিল্কভিটা নামক স্থানে কাজ করে। কিন্তু সেটা কোথায় আমি নিজেও জানিনা। তখন রাত হয়ত আনুমানিক ১০ টা হবে। স্থির করলাম একবার গিয়ে দেখি তাকে পাই কিনা। কিন্তু আমি তো সেই রাস্তা চিনি না। ফুটওভার ব্রীজ থেকে এক লোককে জিজ্ঞাসা করলাম যে, মিল্কভিটা কোম্পানিটা কোথায়। সে আমাকে বল্ল সেতো অনেক দূড়, সেই মিরপুরে। আসলে আমি নিজেও জানিনা কোনটা মিরপুর আর কোনটা মিল্কভিটা। যাই হোক তাকে সেখানে যাওয়ার উপায় জিজ্ঞাসা করতে সে বল্ল এখানে থেকে তো কোনো বাস পাবে না, তাই তোমাকে গুলিস্থান যেতে হবে এই কথা বলে সে আমাকে গুলিস্থান যাওয়ার রাস্তা বাতলে দিল। দেড়ি না করে হাটা শুরু করলাম, অচেনা পথে যাকে পাচ্ছি তাকেই জিগ্যেস করছি ভাই গুলিস্থান কতদূড়।

গুলিস্থান থেকে এক লোক আমাকে মিরপুরের গাড়িতে তুলে দিল। রাতে ব্যস্তহীন রাস্তায় শা শা শব্দে এগিয়ে চলছে বাস। হয়ত আধাঘন্টা বা তার থেকে একটু বেশি সময় পরে বাসের হেল্পার আমাকে মিরপুর দশ নাম্বারে নামিয়ে দিল। সেখানে নেমে মিল্কভিটা খুজতে লাগলাম, কিন্তু মিল্কও পেলাম না আর ভিটাও পেলামনা। অবশেষে একটি দোকানে গিয়ে জিগ্যেস করলাম, দোকানি আমাকে দেখে আমার অবস্থা বুঝতে পারল। সে আমার বাড়ীর ঠিকানা জিগ্যাসা করল, উত্তর শুনে আর বেশি কিছু বল্ল না। কিছুক্ষণ পরে একটা বাস থামিয়ে বাসের হেলপারকে কি যেন বলে দিল এবং হয়ত আমার ভাড়াটাও দিয়ে দিল। এরপরে আমাকে বাসে তুলে দিল।

একসময় বাস এসে থামল এবং হেলপার আমাকে নামিয়ে দিল। বল্ল এই যায়গার নাম পুরানা পল্টন। তুমি এখান থেকে সোজা হাটলে ঘন্টাখানেকের মধ্যেই সদরঘাট পৌছে যাবে। বুঝলাম, আমার আর মিল্কভিটায় যাওয়া হবেনা। কোনো উপায় না পেয়ে রাস্তার পাশে বসে আছি। কিছুক্ষণ পরে টুকরিওয়ালা এক লোক, হয়ত সারাদিন দিন মজুরী করে, বয়স আনুমানিক ৪০/৪৫ বছর হবে, আমাকে দেখে আমার কাছে আসল। তাকে দেখে আমি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছি। কিছু বলতে পারছিলাম না। সে আমাকে অনেক প্রশ্নই করল, ইচ্ছে করেই অনেক প্রশ্নের উত্তর দিলাম না। শেষে জিগ্যাসা করল ক্ষিদে পেয়েছে? প্রশ্নটা শুনে আর স্থীর থাকতে পারলাম না। লোকটি যা বোঝার বুঝে গেছে। কিন্তু রাত তখন আনুমানিক ২টার কম হবে না। কোথাও কোন দোকানপাট খোলা নেই। লোকটি আমাকে বসতে বলে কোথায় যেন গেল এবং প্রায় ২০/২৫ মিনিট পরে হাতে একটি কেক, কলা এবং পানি নিয়ে এসে আমাকে খেতে দিল। আমি খেতে শুরুকরলাম আর লোকটা আমার দিকে তাকিয়ে রইল। জানিনা সে কেন আমার প্রতি এতটা সদয় হল। খাওয়া শেসে সে আমার হাতে পাঁচ টাকার একটি নোট গুজে দিয়ে বল্ল, কাল সকালে, হাত দিয়ে দূড়ে কোথাও, মানে গুলিস্থানের দিকে দেখিয়ে বল্ল ওখানে থেকে গাড়ি যায় সদরঘাট, তুমি সকাল বেলা ওখান থেকে এই পাঁচটাকা দিয়ে সদরঘাট চলে যেও এবং পরে বাড়ি চলে যেও। বলেই লোকটা উঠে চলে গেল। কিন্তু আমি আজও সেই লোকটিকে ভুলতে পারিনি। তার চেহারা আমার মনে নেই, তার নাম ঠিকানা বা কোনকিছুই আমি জানি না। কিন্তু সেই লোকটি সহ, মিরপুরের সেই দোকানীর কথাও আমার মনে গেথে থাকবে চির অম্লান হয়ে। আর মনে থাকবে সেই মুখোশধারী মানুষরূপী সেই জানোয়ারটির কথাও, যে আমার অসহায়ত্বের কথা জেনেও আমার সর্বশ্ব নিয়ে আমাকে পথে রেখে গেছে।

চলবে............

Halo Dear Friends,
We can do anything for ourselves if we want. We do not have to pay any attention to this. So I have made the following decisions. The ones who complete the following steps will also give him the same reprisal.

Follow @sohelsarowar

Resteem any post from my Blog

Upvote any post from my Blog

I request be honest and kind, once you completed all steps then dont forget to leave your post URL in the comment box i will do sometime instant otherwise confirm in 4-24 hours. respect everyone. Thank You!

Note: Please do not post multiple Post URL in the same blog. 1 person Allow 1 URL then after 24 hours i will new post then you can give me the new one.

Thank you...

Sort:  

I gave you a vote!
If you follow me, I will also follow you in return!
Enjoy some !popcorn courtesy of @rudrakshpareek !