জীবনের মানে লুকিয়ে মরণে
সত্য লুকিয়ে মিথ্যায়
এসবের আড়ালে আছো যে তুমি
আমি খুঁজি সেই তোমায়..
- প্রতিবাদ, Cryptic Fate
কিছু কিছু গান আন্ডাররাটেড থাকাই ভালো, সব গান সবার জন্য না। বাংলাদেশের আন্ডারগরউন্ড ব্যান্ড মিউজিক এর ক্ষেত্রে ব্যাপার টা যেন চিরন্তন সত্য। আজকে টেবিলে রাখা বই খাতা আর ল্যাপটপে ঘ্যান ঘ্যান করতে থাক লেকচার এর প্যারা থেকে একটু রেহাই পেতে আশ্রয় নিয়েছিলাম অনেক অনেক বছর পুরোনো বাংলা ব্যান্ড গান গুলো তে। মোর স্পেসিফিকালী আন্ডারগরউন্ড গান গুলো তে, যেসব গান এর সাথে আমার শৈশব কৈশোর এপ্রোতপ্রোতভাবে জড়িত। কিছু কিছু গান এর ইমোশনাল ভ্যালু এতই বেশি থাকে যে সেসব গান গুলো নিজের পার্সোনালীটির একটা অংশ হয়ে যায়। দে বিকাম আ পার্ট অফ ইউ।
সবার গানের চয়েস ভিন্ন হবে, এটা অস্বাভাবিক কিছু না। বাট ইফ ইউ লাইক মাই পার্সোনালীটি, ইউ হ্যাভ টু রেসপেক্ট দ্যা মিউজিক দ্যাট হেল্পড শেপ দ্যাট পার্সোনালীটি। জিনিস টা একটু বাড়াবাড়ি পর্যায়ের ই মনে হবে অনেকের কাছে। গান শোনার সাথে আবার পার্সোনালীটির কি!! কিন্তু আমরা যারা আন্ডারগরউন্ড মিউজিক এর শ্রোতা, আমাদের এই সত্য অস্বীকার করার উপায় নেই। অনেকের অনেক ভিন্ন কারণ থাকবে, কিন্তু এটা আমাদের জন্য একটা আন-ডিনাইয়েবল ট্রুথ। এট লিস্ট ফর দ্য মোস্ট অফ আজ। ইংরেজি তে "us" এবং বাংলায় "আজ" এর তফাত করা তো দেখি মুশকিল হয়ে গেলো!
আমার ধারণা এর মূল কারণ হচ্ছে লিরিকস। আন্ডারগ্রাউন্ড গানের লিরিকস খুবই গুরুত্তপূর্ণ। দে মেক ইউ থিংক, দে মেক ইউ আস্ক কোয়েশ্চানস। ২০০২ সালে যখন ব্ল্যাক এর "মানুষ" গান টি শুনি, আমার বয়স তখন সবে মাত্র ৯ কি ১০ ছুই ছুই।
অনেক অনেক মৃত্যুর পর
শান্তি ফিরবে একদিন
ক্রমাগত ঘৃণায় পুড়ে
মানুষ হবে নিষ্প্রাণ...
-মানুষ, Black
লাইন গুলো একদম নাড়িয়ে দিয়েছিল ভিতরে। কি ভয়ংকর কথাবার্তা, এসব কেউ লিখে গানের খাতায়?! ১০ বছরের একটি ছেলের মাথায় এর মর্মার্থ সম্পূর্ণ না ঢুকাই স্বাভাবিক, না ঢুকাই হয়তো ভালো। কিন্তু সেই যে একটা গুজবাম্পস এর মত ফিলিংস পেয়েছিলাম, সেটা যেন নিষিদ্ধ সুখের মত নেশা লেগে যায়। এক এক করে ব্ল্যাক, আর্টসেল, শিরোনামহীন ও অর্থহীন এর গান গুলো ঠোটস্থ করে ফেললাম।
একবার ক্লাস ৫ এ থাকতে স্কুল পিকনিকে বড় ক্লাসের ছাত্রদের শুনলাম গলার তুঙ্গে উঠের আর্টসেলের গান গাইছে। আমার ক্লাসমেট র হা করে তাদের তামাশা দেখছে আর গানএর লিরিক্স, সে তো দুর্বোধ্য বেপার। সবাইকে তাক লাগিয়ে আমিও বেসুরা গলায় তাদের সাথে যোগ দিয়ে যখন গাইতে শুরু করলাম...
তবু চিৎকার যখন অর্থহীন আর্তনাদ
প্রতিবাদ কোন দুর্বোধ্য ভাষা
সবাই যখন আদিম উল্লাসে মত্ত
ভুল জন্ম তোমাকে জানাই বিদায়
-ভুল জন্ম, Artcell
...বেশ কিছু মাথা ঘুরে তাকালো, ক্ষণিকের জন্য মাত্র। এরপরই কয়েকজন "বড় ভাই" পিঠ চাপড়ে দিয়ে আমন্ত্রণ জানালো, ওয়েলকাম টু দ্যা আন্ডারগরউন্ড!! আন্ডারগরউন্ড গানে একটা বিপ্লব বিপ্লব আমেজ থাকে, তাই উঠতি বয়সে এসব গান একসাথে শোনার ভাবটাই আলাদা ছিল।
সেই যে এক নতুন জগতে পা দিয়েছিলাম, এখনো শত ব্যস্ততার ভীড়ে সেই জগৎ মনের এক কোণে নিশ্চুপ অপেক্ষায়। তাই তো এখনো যান্ত্রিক জীবনের ক্লান্তি কাটাতে, একটু গুজবাম্পস এর খোজে আজও ফিরে যাই শিরোনামহীনের হাসিমুখে....
প্রতিটি রাস্তায় প্রতিটি জানালায়
হাসিমুখ, হাসিমুখে আনন্দধারা।
তুমি চেয়ে আছ তাই, আমি পথে হেটে যাই
হেটে হেটে বহুদূর, বহুদূর যেতে চাই
-হাসিমুখ, শিরোনামহীন
সবগুলো গানের লিংক লিরিকস এর নিচে দিয়ে দিলাম।