মধ্যরাতের তালগাছ।

in BDCommunity3 years ago

মধ্যরাতের তালগাছ।


image.png
Source


অভাবের তাড়নায় রফিক মিয়া তার স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে গ্রাম থেকে রাজধানী ঢাকায় পাড়ি জমালো। ঢাকার একটা প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকতে শুরু করলো তারা। বর্তমানে জনবহুল হলেও তখনকার সময়ে জায়গাটা ক্ষেত আর জঙ্গলে ভড়পুর ছিল। ২/১ টা বাড়িঘর ভাগ্য জোড়ে দেখা মিললে মিলতো এমন একটা জায়গায় বাস করতো তারা। তো সেখানের একজন জমির মালিক তাকে কৃষিকাজের জন্য বেশ বড় জমি বর্গায় দিল। রফিক মিয়ার মূল কাজ ছিল মধ্যরাতে ফসলে পানি দেওয়া আর দিনের বেলায় মাঝেমাঝে ফসল দেখাশুনা করতো। ফসল উঠানোর সময় হলে বিক্রির টাকার একটা ভাগ পেতো রফিক মিয়া আবার অনেকসময় ফসলও পেত। আবার তারা যেই জায়গাটা বসত ভিটা হিসেবে ব্যবহার করতো তার পাশে কিছুটা ফাকা জায়গায় ফসলও ফলাতো তারা। লাউ, কুমরা, টমেটো, মরিচসহ বিভিন্ন সবজি ফলাতো বাড়ির পাশে আর সব নিয়ে তাদের দিনগুলো ভালোই চলছিল। রফিক মিয়ার ফসল ফলানোর প্রতি মায়া মহব্বত দেখে জমির মালিক একদিন তাকে ডেকে বললো,

জমির মালিকঃ রফিক মিয়া, ভালোই তো মন দিয়ে কাজ করো দেখছি। তো কতোদিন আর অন্যের জমিতে কাজ করবে?
রফিক মিয়াঃ কি আর করমু মহাজন? নিজের বইলা তো আর কোন জমি জমা রইলো না আর হইলোও না।
জমির মালিকঃ শোনো মিয়া, আমি পরিবারসহ অন্য একটা গ্রামে চলে যাচ্ছি কারণ আমাদের বাড়ি তৈরি হয়ে গেছে সেখানে। তুমি যেহেতু অনেকদিন ধরে আমার জমিতে কাজ করছো তো আমি চাচ্ছি বাজার দরের চেয়ে অনেক কম মূল্যে তোমাকে জমি লিখে দিব। কি বলো তুমি?
রফিক মিয়াঃ মহাজন অনেক ভালো প্রস্তাব দিছেন আর আমার জমাইনা কিছু টাকাও আছে কিন্তু মহাজন, এইহানে আমরাও বেশিদিন থাকমু না। আমরা এইহানে বিদেইশা, আইছিলাম কাম কাজ কইরা টাকা জমাইয়া নিজ গ্রামে গিয়া জমি কিনুম হেই আশায়। মাফ করবেন,মহাজন।
জমির মালিকঃ বুঝলাম, না সমম্যা নেই। আমি তোমাকে প্রস্তাব দিলাম, বাকিটা তোমার ইচ্ছা।


রফিক মিয়ার ছেলেটা তখন প্রায়ই রাত জেগে পড়াশুনা করতো। কোন এক রাতে তার ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য পেট ব্যাথা শুরু হলো। ওয়াশরুম টা ছিল বাসার বাহিরে একটা তালগাছ বরাবর। বাসার সবাই ঘুমে ছিল তাই ছেলেটা একাই বের হলো। যখনই ওয়াশরুমের কাছাকাছি গেল তখন সে দেখতে পেল ওয়াশরুমের দিক থেকে ছায়ার মতো কিছু একটা দৌড়ে তালগাছ টার দিকে গেল। ছেলেটা একটা চিৎকার দিয়ে সাথেসাথে সেখানেই অজ্ঞান হয়ে পরে গেল। রফিক মিয়া চিৎকার শুনে দৌড়ে এসে দেখে তার ছেলে বাহিরে অচেতন হয়ে পরে আছে। কি করবে বুঝতে না পেরে ছেলেকে ঘরে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করলো। সকালে ছেলেটার জ্ঞান ফেরার পর সে তার বাবা কে বললো কি হয়েছিল সেদিন। রফিক মিয়া ব্যাপার টা কানে না নিয়ে ছেলে কে বললো,

রফিক মিয়াঃ অনেক রাইতে বাইর হইছিলি তো বাবা, মনের ভয় থিকা মনে হইছে অমনটা। কিচ্ছুই নাই এইহানে, আমি রাইত বেরাইতে কামে বাইর হই কিছু থাকলে তো আমি দেখতাম। তুই আর রাইত কইরা একলা বাইর হইস না। আমি থাকলে আমারে নাহয় তোর মায়রে নিয়া বাইর হইস।

এভাবে করে ব্যাপার টা বুঝ দিল সেদিন।


এরপর আরেক রাতে সবাই যখন ঘুমাচ্ছিল হঠাৎ রফিক মিয়ার বউয়ের ঘুম ভেঙে গেল ঝমঝম কোন শব্দ শুনে। তো রফিক মিয়ার বউ উঠে বসলো, জানালা দিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে সে অবাক। দেখলো একটা মেয়ে সাদা কাপড় পড়ে বড় বড় চুল ছেড়ে দিয়ে হাতে আগুনের গোলা নিয়ে তালগাছ টা পার হয়ে ক্ষেতের দিকে যাচ্ছে। এ দেখে রফিক মিয়ার বউ ভয়ে সেদিন রাতে কারো সাথে কথাই বললো না, নির্ঘুম কেটে গেল রাত টা। পরবর্তীতেও কাওকে বললো না বাসার মানুষ ভয় পাবে সেটা ভেবে। তারা এভাবেই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জিনিশ দেখেও দিন কাটাতে থাকলো সেখানে। তালগাছ টা নিয়ে রফিক মিয়ার সাথে সবচেযে বড় ঘটনা টা ঘটলো যেটা রফিক মিয়ার ভাবনার সীমার বাহিরে ছিল।

ফিরে আসছি ছোট্ট একটা বিরতির পর আগামিকাল ইন শা আল্লাহ।

"বিরতি | To Be Continued"

"Be Good, Think Good and Do Good"

"Stay Home, Stay Safe & Let's Beat Corona".