হারানো স্মৃতির ডাকা দিনে...

in BDCommunity2 years ago (edited)

দিঘীর পাড় ডুবে যাওয়ার বর্ষা আর শরতের ছানির মতো মেঘ, কিংবা শীতের এক টুকরো শিশিরের পাশে জীর্ণ প্রকৃতির গাছের কোঁকড়ানো পাতা -এ পৃথিবীর বিশাল আয়োজনের অল্প কিছু সৌন্দর্যের চোখের দেখা, স্বল্পময় মনের কোণঘেঁষা সারি সারি ভাবনার ভেতরে চলে যাওয়ার মাঝে যে সার্থকতা, তার মাঝে পেয়েছি এক উপভোগ্য জীবন, একটিবারের অনুভবের স্রোতে পালতোলা নৌকার মাঝি যেমন তার রোদে ভেজা আসন্ন দিনটি দেখতে পায়, তার মতো করে খুঁজেছি দৃশ্যপট, দেখা মেললো শিষের কুঁড়ি, একটি জীবনের শুরুর কিছু লেশহীন টুকরো ; বেশ কিছুক্ষন যেটি মনে গেঁথে রইলো তা সৃষ্টিছাড়া কিছু নয় নিশ্চয়ই।

Source

বেশ কিছুদিন ঠিক করে রেখেছিলাম এবার দীর্ঘ এই নিত্যকার কাজকর্মের সাময়িক ইতি টেনে ক্ষান্ত দিয়ে রাখি, ক্লান্ত এই নিষ্প্রাণ মন খুঁজে চলেছে হাওয়া বদলের চেষ্টা, বারবার অনুনয়ে অনুরোধ করে বসা, এবার তবে নিয়মের লঙ্ঘন করে দৃষ্টির যে অংশটিতে যাওয়া হয় না বহুদিন, তার কাছে একটিবার চলো। যখন ঘনঘোর বর্ষার অথৈ পানি জোয়ারের মতো উঠে আসে, বাঁধের কি সাধ্য সে পানি আটকে রাখে, প্লাবনের মতো বয়ে যায়। আমার মনের স্রোতেরা বোধহয় সেরকম ভাবে সায় দিল, এবার ঘুরে আসা যাক সেখানে, যার জারুল গাছগুলো সাক্ষ্য দেয় নবযৌবনের দিনগুলোর।

একটি ব্যাগভর্তি জামাবস্ত্র, ধূসর রঙের পান্জাবি, রোদচশমা, কড়িসম্বল, নিত্যপ্রয়োজনের কিছু জিনিস বাঁধা হলো। পুরোদস্তুর তৈরি হয়ে তালা মেরে ঘরের বাহিরের পথে এসে পড়েছি, রোদের আঁচ বাড়ছে, সকাল গড়িয়ে দুপুরের ঘন্টাধ্বনি বাজার শুরু, বাসের জানালাটির পর্দার ফাঁক জুড়ে একদিকে শহরের কোলাহল, অন্যদিকে কর্মব্যস্ততার রাশি ফুটে উঠছে, আমি তফাতে বসে দেখছি অল্প করে, আর চোখ বুজে নিচ্ছি লম্বা শ্বাস, লম্বা একটি সফরে যাবো বলে পুরনো সে স্থানটিতে যেথায় স্মৃতি জড়িয়ে আছে বিস্তর, ঘটনার রেশ ফুরালেও তার অনুভূতি মিলিয়ে যায় নি।
বাস চললো আঁকাবাঁকা নগরীর তীর ঘেঁষে, জনস্রোতের পাশ দিয়ে অল্প করে মহাসড়কের লালসবুজ বাতির নিচ দিয়ে, সুরসুর করে নিঃশব্দে।

কি আলো, কি ছায়া, গাছের সারি মাথা তুলে আছে রাস্তার দু ধারে, যেন জানান দিচ্ছে আগমনবার্তা, যেন দূর থেকে ডাকছে, এতদিন পর কত বাধা ঠেলে এলে হে বন্ধু, কেমন করে মনে পড়লো আমার কথা, কেমন ছিলে এতদিনের শেষের মাঝে? পুরনো সে হালকা চেনা -অর্ধঅচেনা পথের অব্যাক্ত কথাগুলো পড়ে নিলাম, আর বলে উঠলাম, মনে পড়েছিল বলেই আবার সে চোখের দেখা, মিলিত হওয়া, কথা বলো ওঠা, যেমনটি বহুদিনের হারিয়ে যাওয়া বন্ধু একে অন্যকে চিনতে পারে, গলা জড়িয়ে ধরে খুশির উদ্বেলতায়, মায়ার বিহ্বলতায়।
চুপিসারে পথ চলতে লাগলাম -গন্তব্য দীর্ঘ কিছু বছরের ফেলে আসা নগর, মনের মতো সুন্দর সে নগর।

স্টেশনে পৌঁছাতে ব্যাগ কাঁধে নেমে পড়লাম, কিছু স্মৃতি মনের আড়ালে মিলিয়ে নিতে লাগলো পুরনো -নতুনের মাঝে ব্যাবধানটা, কিছু পটপরিবর্তনের জিনিসগুলো কেমন রয়েছে, কেমন দেখতে হয়েছে। চারদিকে তাকাই আর আগের মতো রওয়া মাঠঘাট, ঘরবাড়ি, রাস্তার সীমারেখা, পুকুরঘাট, জঙ্গলের তীর, মঠের কিনারা, ঈদগাহের সে ইটের বেদী, সব যেন আগের মতোই আছে। একটার পর একটা স্থানের পাশ দিয়ে যেতে যেতে মনে হলো, সবকিছু তো রয়েই যায়, শুধু মানুষগুলো বদল হয়, পুরাতনের বিদায়ে, নতুনের আদায়ে। কিছু মুখের দিকে তাকিয়ে অচেনা আবহে মনটা বিষিয়ে উঠলো খানিক।

থামার নাম নেই, গন্তব্য যে নির্দিষ্ট করি নি, এসেছি সে আমার হৃদয়ের মধ্যে থাকা স্থানটিকে দেখার জন্যে,স্পর্শ করার জন্য, প্রশ্বাসে সে নির্মল বাতাসের বুকভরে কিছুক্ষণ আনমনা বেলা কাটানোর জন্য। কুটিরবাড়ির পাশে যেখানটায় আত্নীয়ের বাস, তাদের কি বিরক্ত করে যাওয়া ঠিক হবে? এই ভেবে হাপ-হিত্যেশের মাঝে পাশ ফিরে হেঁটে চললাম, যেখানে মনখানা বোধহয় বেশিক্ষণ পড়ে থাকতো। সেই বিশ্ববিদ্যালয় এর পাশে থাকা বটবৃক্ষের নিচে পাকা বসার জায়গাটি, ইন্দ্রা নেই এখানে,সে ছিল কোনো কালে যখন পুষ্পকলির মতো মনে রংতুলির রং ছিল অফুরন্ত, আলসে রোদের ভীড়ে সারাবেলা ঘুরে বেড়াতাম, নদীর তীরে কি কিনারে।

Source

দিনের শুরু কি শেষে, সন্ধ্যার আগের বিকেলে যখন গোধূলির লালিমার আকাশে ছায়া সূর্য বাড়ি ফিরছে, তার মাঝে পেয়েছিলাম নিজেকে আর তাকে, সে নেই এখন এ ধারে, কিন্তু তার হাতের আঙুলের ডগায় ফুলের মালাটি দিয়েছিলাম মনে পড়ে, বকুলের ঝরা পাপড়ি যে এখনো ঝরছে অনর্গল, আমি যে তার সাথে জীবনের সে পথটি হেঁটে বেড়িয়েছিলাম,সারা মনপ্রান জুড়ে যখন উষার বেদনায় কাতর মন হতাশ হয়ে পড়ছিল, সবকিছু থেমে থেমে নামছিল, তাকে পেয়ে ক্ষনিকের সঙ্গী হয়ে আবার পথচলতে সুধা দিল, যেমন করে অন্ধকার রাতের বিজলী কালোমেঘের মাঝে আলোর সঞ্চার করে, সে ছিল তেমনি।

হায়রে,ইন্দ্রার তন্দ্রা কেটে গেছে মাঝে, তার ঘোর কি কখনো ফুরোয়? তার আহ্বান যে এখনো ডাকে,তার বলে ওঠা, চলো না কুড়োবো আবার সেই ঝরে পড়া ফুলগুলো, মালা গেঁথে হাতে পরবে বলে, বসন্তের দিনে। মন চাইছিল চিৎকার করে বলি,এসেছি ফিরে সে সময়ে, সে নগরে, সে বটবৃক্ষের নিচে, সখা, চোখ মেলে দেখো, কোথায় লুকিয়ে আছ। কিন্তু তা হয় নাকি?বাস্তবতা আর কল্পনা কখনো মিশে না, যেমন তেল-জল। মনের সাধ পূর্ণ হলো শেষে,সার্থক ভ্রমন, এবার আক্ষেপ নেই, একটি অদৃশ্য তৃপ্তি সারা মনে ছড়িয়ে গেলো।

আর আমি ফিরে চললাম সেই নিবাসে, যাদের অনেক বছর পর চমকে দিতে হবে,ভালো থাকুক ইন্দ্রা।
দিনের সূর্য গাছের এক চিলতে আলোছায়ার মধ্যে দিয়ে ঢলে পড়লো অস্ত যাওয়ার দিকে..।

Sort:  

You post has been manually curated by BDVoter Team! To know more about us join our Discord.


Delegate HIVE POWER to us & earn HIVE daily.

FOLLOW OUR HIVE AUTO CURATION TRAIL