বয়স ১৬ সপ্তাহ ২ দিন। একটু একটু করে মাতৃগর্ভে বড় হয়ে উঠছে ছোট্ট এই মানব ভ্রুনটি। ইতিমধ্যেই হার্টবিট সচল হয়ে উঠেছে। এখন সময় অঙ্গগুলো একটু একটু করে বিকশিত হবার। আর কিছুদিনের মাঝেই ছোট এই মানবভ্রুনটি একটি মানব শিশুতে পরিনত হবে। এরপর শুধুই অপেক্ষার পালা। ইতিমধ্যেই অর্ধেক সময় পার হয় গিয়ে। আর প্রায় অর্ধেক সময় বাকি। এরপর মাতৃগর্ভ থেকে বের হয়ে চিৎকার দিয়ে পুরো পৃথিবীকে জানান দিবে নিজের অস্তিত্বের কথা।
মানব জীবনের খুব সুন্দর, ছোট কিন্তু শৈল্পিক একটা সার্কেল আছে। এই সার্কেলটা একটু মনযোগের সাথে খেয়াল করলে মুগ্ধ হবে যে কেউ৷ কত সুন্দর একটা সিস্টেম। মানব ভ্রুনটি ধীরে ধীরে মানব শিশুর রূপ ধারন করে পৃথিবীতে আসে। এরপর একটু একটু করে বড় হয়। সময়ের সাথে সাথে আশেপাশের মানুষের কাছ থেকে তাদের আচার আচরন, চলাফেরা, ভাষা সবকিছু শিখে। একটা সময় পর নিজের পায়ে নিজে দাঁড়াতে শিখে। পরিচিত হয় পৃথিবীর সাথে। তার মতই অন্য মানুষের সাথে মিশতে শিখে। কিভাবে নিজের জীবন নিজে চালাতে হয়, সেটাও শিখে ফেলে। পুরো পৃথিবীতে একা কিংবা পরিবারের সাথে বাঁচতে শিখে।
সবকিছুর শুরু যেমন আছে, ঠিক তেমনি শেষও আছে। সেদিনের সেই ছোট মানবশিশুটি ধীরে ধীরে পরিনত হয়ে একটা সময় পর বৃদ্ধ হতে শুরু করে। যেভাবে অন্য এক জগত থেকে পৃথিবীতে এসেছিল, ঠিক সেভাবেই আবার হুট করে কালের গহবরে হারিয়ে যায়। সেখান থেকে কেউ আর ফিরে আসে না।
এই সার্কেলটা আমাদের সবার। কত ছোট এই জীবন, অথচ কত ঘটনাবহুল। চলার পথে প্রতি পদে পদে কতশত গল্প তৈরি হয় আমাদের জীবনে৷ কিছু গল্প আমাদের জীবনে প্রভাব রাখে, আবার কিছু গল্পে কোনো প্রভাব নেই। কিছু গল্প সাথে সাথেই হারিয়ে যায়, আবার কিছু গল্প আজীবন অন্তরে দাগ কেটে রাখে। অথচ একটা সময় পর সবকিছুর সাথে সাথে এসব গল্পগুলোও হারিয়ে যায়।
আজকের দিনটা আমাদের জন্য বিশেষ একটা দিন ছিল। যদিও গত দুইদিন অনেক ব্যাস্ত সময় কাটিয়েছি। আজও কিছুটা ব্যাস্তটা ছিল। কিন্তু ব্যাস্ততাকে পাশ কাটিয়ে বিকেল বেলা ওয়াইফকে নিয়ে হাসপাতাল চলে গেলাম। উদ্দেশ্য ছিল "আলট্রাসনোগ্রাফ অফ প্রেগনেন্সি প্রোফাইল।" ভেবেছিলাম বেশিক্ষণ লাগবে না। কিন্তু ভাবায় ভুল ছিল। অনেকটা সময় আমাদের অপেক্ষা করতে হয়েছিল। আমাদের মতো আরো অনেকেই আল্ট্রাসনোগ্রাফ করাতে এসেছিলেন। সবার চোখে মুখেই চাপা আনন্দ আর উত্তেজনা কাজ করছিল। আমরাও এর ব্যাতিক্রম ছিলাম না।
দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করার পর যখন আমাদের সুযোগ আসলো, তখন ওয়াইফের সাথে আমিও ডাক্টারের কেবিনে ঢুকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে অনুমতি দেয়া হয় নি। মনে কিছুটা কষ্ট পেলেও ওয়েটিং রুমে খুব আগ্রহের সাথে অপেক্ষা করছিলাম।
কিছুক্ষণ পর ওয়াইফ যখন বের হল, তার চোখ মুখে আনন্দ যেন ঠিকরে বের হচ্ছিল। তার কাছ থেকে জানলাম, বাচ্চা ভাল আছে। সবকিছু স্বাভাবিক। হার্টবিটও শুরু হয়ে গিয়েছে। এখন শুধু ভ্রুন থেকে মানবশিশুতে রূপান্তরিত হবার অপেক্ষা। ইতিমধ্যেই ১৬ সপ্তাহ পার হয়ে গিয়েছে৷ এখন ধীরে ধীরে অঙ্গগুলো বিকশিত হবে। একটু একটু করে হাত, পা মুখের অবয়ব তৈরি হবে৷ ৪ সপ্তাহ পর আবারও পরীক্ষা করা যাবে৷ তখন বাকি তথ্যগুলোও জানা যাবে।
রিপোর্ট কার্ডে যখন চোখ বুলাচ্ছিলাম, তখন আমার মনেও কম উত্তেজনা কাজ করছিল না। এ যেন অদ্ভুত এক অনুভূতি। যে অনুভূতি লিখে প্রকাশ করা যাবে না৷ তবুও যতটুকু সম্ভব লিখে প্রকাশ করার চেষ্টা করছি৷ কারণ এই লেখাগুলো তো আজীবন থেকে যাবে৷ আজ থেকে অনেক বছর পর হলেও কখনো যদি লেখাগুলো চোখে পড়ে, এই আশায়।
আজকের দিনটা সত্যিই আমাদের জন্য খুব সুন্দর, ভাল ও আনন্দময় একটা দিন। এই আনন্দটুকু যেন সবসময় থাকে। স্বপ্নগুলো যেন সত্যিই পূরণ হয়। পৃথিবীর আরো একজন নতুন সদস্য, নতুন মানুষের অপেক্ষায় আমরা...
শুভকামনা রইলো আপনার বাচ্চার জন্য।❤️
আপনি যে কথাগুলো বলেছেন এগুলো এমব্রায়োলজির কথা,এগুলো পড়লে, তারপর মানবদেহের ভিতরে প্রত্যেকটা অঙ্গ প্রতঙ্গ এবং তার ম্যাকানিজম যে কত বৈচিত্র্য,এসব পড়লে সত্যিই অবাক হতে হয়,আর যে সৃষ্টিকর্তা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তার প্রতি আনমনে মাথা নত হয়ে আসে।
একদম। সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেও শেষ করা যাবে না৷
শুভকামনা সবার জন্য। অসাধারণ একটা ব্যাপার। একেবারে ওয়ান্স ইন আ লাইফটাইম ধরণের