ভয়...
মধ্যরাতের তালগাছ গল্পটা লিখেছিলাম প্রায় ৫ দিন হবে। আজ সেই গল্পের পরের পার্ট টা নিয়ে কথা বলবো।
রফিক মিয়ার রাত থাকতেই ঘর থেকে বের হওয়ার একটা বদ-অভ্যাস ছিল। সাধারণত ফজরের আযান এর পরই বের হতো কিন্তু মাঝেমাঝে আগেই বের হয়ে যেত কারণ সে এতটু বেশিই কর্মঠ ছিল। রফিক মিয়ার মেয়ের ঘরে ফুটফুটে এতটা কণ্যা সন্তান জন্ম নিল যে দেখতে এতোটাই সুন্দর ছিল যে সবাই তাকে আদর করতে চাইতো। বাচ্চা টার নানি মানে রফিক মিয়ার বউ সেই নাতনির চোখে মোটা করে কাজল দিয়ে দিত যাতে কারো নজর না লাগে। রফিক মিয়া তার এই নাতনি কে একটু বেশিই আদর করতো। আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকা সত্ত্বেও প্রতিদিন চেষ্টা করতো বাজার থেকে ডালিম কিনে এনে রস বানিয়ে খাওয়ানোর জন্য আর সাথে তালমিসরি। রফিক মিয়া একদিন কোন এক কারণে তার বউয়ের সাথে রাগ করে বাসা থেকে বের হয়ে কোথায় যেন চলে গেল, সারাদিন কোন খবর পাওয়া গেল না। কিন্তু নাতনি কে রেখে কিভাবে থাকে দুরে? সন্ধ্যার সময় হাতে ডালিম আর একটা খেলনা টিয়া পাখি নিয়ে এসে যেই না নাতনি কে কোলে নিল, পিচ্চিটার মুখ দেখে সব রাগ পানি হয়ে গেল। একদিন পিচ্চিটাকে পাওয়া যাচ্ছিল না কোথাও। পরে অনেক খুজে দেখা গেল যে পিচ্চিটা হাপুর হেটে সিড়ি বেয়ে বাড়ির ছাদে চলে গেছে। বাচ্চা মানুষ দেখে রাখতে পারে না তার উপরে রফিক মিয়ার আদরের নাতনি। এই কারণে রফিক মিয়া তার বউয়ের গায়ে হাত পর্যন্ত তুলেছিল। অনেক ভালোবাসতো নাতনি কে।
তো রফিক মিয়া খুবই সাহসি ছিল, সে জ্বীন-ভুত এর ভয় পেত না। সে সাধারণত ফজরের আযানের পারে বের হতো ক্ষেতে পানি দেওয়ার জন্য। তো কোন এক গভীর রাতে হঠাৎ তার ঘুম ভেঙ্গে গেল আর সাথে সাথে তার মাথায় আসলো যে ক্ষেতে পানি দিতে হবে। তারপর উঠে বাহিরে দেখলো জোৎস্ন্যা রাত আর ভাবলো আযান দিয়ে দিয়েছে, হয়তো টের পায় নি। তো রেডি হয়ে ঘর থেকে বের হতে লাগলো এমন সময় পেছন থেকে তার বউ ডাক দিয়ে বললো,"এতো রাতে কোথায়া যাচ্ছেন?" উত্তরে সে জানালো,"কেন, ক্ষ্যাতে পানি দিতে যাই, নতুম কাম নাতো"। এরপর তার বউ জানালো যে মাত্র ৩ টা বাজে এখনই কেন যাবে। পরে রফিক মিয়া ভাবলো যে বের যেহেতু হলোই তো কাজ সেরেই আসুক। একথা ভেবে বের হয়ে গেল রফিক মিয়া।
সেই তালগাছটার কথা মনে আছে যেখানে রফিক মিয়ার ছেলে ছায়া দেখে অজ্ঞান হয়েছিল? আবার রফিক মিয়ার বউ সাদা কাপড় পড়া কাকে যেন আগুন নিয়ে ছুটতে দেখেছিল? সেই তালগাছটার কাছাকাছি চলে আসলো আজ রফিক মিয়া। তালগাছটার পাশ দিয়ে যখন হেটে যাচ্ছিল, হঠাৎ রফিক মিয়ার শরীরে একটা শীতল বাতাস বয়ে গেল আর সেই বাতাসের সাথে একটা পোড়া পোড়া গন্ধ ছিল। সাথেসাথে রফিক মিয়ার শরীর ঠান্ডা বরফের মতো গয়ে গেল। বিষয়টা গায়ে না লাগিয়ে রফিক মিয়া হাটতে লাগলো তার ক্ষেতের দিকে। ক্ষেতে গিয়ে পানি দেওয়া শুরু করলো কিন্তু আজ কেন যেন রফিক মিয়ার শরীর ভালোই লাগছে না। খুব অস্থির লাগছিল আর বারবার শরীর ঘামাচ্ছিল। এমন সময় পেছন থেকে কে যেন তার কাধে হাত দিল। পিছনে তাকিয়ে রফিক মিয়া কিছু একটা দেখতে পেয়েছিল কিন্তু কি দেখেছিল তা প্রায় ২০ বছর টর আজ পর্যন্ত তার পরিবারের কেউ জানে না কারণ সে কাওকে বলে নাই। তো সাথেসাথে রফিক মিয়া ক্ষেত ছেরে দোড়তে লাগরো আর সাথে সিগারেট ধরাতে লাগলো। দৌড়াতে দৌড়াতে সেই তালগাছটা পার হওয়ার সাথে সাথে পেছন থেকে কেউ একজন বলে উঠলো,"ভয় পাইছস? পিছনে তাকা, পিছনে তাকা, দেখ আমারে, তরে ছাড়মু না"। রফিক মিয়া পিছনে তাকানোর সাহস পেল না। সাহসী সেই লোকটা ভয়ে দৌড়াতেই লাগলো তারপর বাসায় গিয়েই পানি চেয়ে নিল আর এতোটাই ঘামছিল যেন সে কেবলই গোসল করে এসেছে। সকালে তার এতোটাই জ্বর এসেছে যে সে বিছানা থেকে উঠতেই পারে নাই। তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে অনেক পরীক্ষা-নিরিক্ষার পর জানা গেল সে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে। এই ভয় থেকে তার মৃত্যু অনিবার্য হয়ে গেল আর সেই ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলবো অন্য কোন একদিন ইন শা আল্লাহ।

Your stories are great. I like them very much. I am waiting to read the rest of the stories
Thank U.
I'll try to publish the rest of the story very soon In Sha Allah.