বেশ কিছুদিন ধরেই আমাদের নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে সবার মধ্যে খুব হইচই দেখা দিচ্ছে। বাচ্চাদের যদি পরীক্ষাই না থাকলে তাদের পড়তে বসানো যাবে কিনা এসব ভেবে অনেক অভিভাবকরা এই নতুন শিক্ষানীতিকে সাপান্ত করে যাচ্ছে। কিন্তু আসলেই কি পরীক্ষা ছাড়া বাচ্চাদের পড়াশোনা করানো সম্ভব? আমাদের শিক্ষকেরা কি পারবে প্রতিটা ছাত্রের সঠিক ধারাবাহিক মূল্যায়ন করতে? কয়েকদিন আগে "তিন ভুবনের শিক্ষা" বইটি পড়ছিলাম, যেখানে জাপান, নেদারল্যান্ডস এবং বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে চমৎকার ও মজার অনেক তথ্য দেয়া রয়েছে। সুশিক্ষায় এগিয়ে থাকা বিশ্বের বড় দেশগুলোর মধ্যে জাপান আর নেদারল্যান্ডস কিভাবে প্রাথমিক শিক্ষার কার্যক্রম সাজিয়েছে, কিভাবে ৩/৪ বছর বয়সী বাচ্চাদেরকে শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে সাবলম্বী করে গড়ে তোলা হচ্ছে ওসব থেকেই কিছু তথ্য আজকে শেয়ার করি।

প্রথমেই শুরু করবো বিশ্বের সবচেয়ে সুখী মানুষের দেশ নেদারল্যান্ডসকে দিয়ে। অদ্ভুত ব্যাপার হলো, এদেশে বাচ্চাদের প্রি-স্কুলিং শুরু করা যায় দুই বছর বয়স থেকেই। তবে এটি বাধ্যতামূলক নয়। অভিভাবক বাচ্চার চার বছর হওয়ার আগে যেকোনো সময়ই তাদের শিশুকে নিয়ে প্রি স্কুলে ভর্তি করাতে পারে। এই স্বাধীনতা থাকার জন্য প্রতিমাসেই তাদের স্কুলে নতুন বাচ্চা দেখা যায়। আর এজন্য স্কুলে নিয়ম করে দেয়া হয় নতুন কেউ আসলে যাতে পুরোনো বাচ্চারা তাদের সাহায্য করে। এখান থেকেই অন্যকে সাহায্য করার মানসিকতা শিশুদের মধ্যে গড়ে উঠে।
এদেশে প্রি স্কুলে সময় থাকে সপ্তাহে দুইদিন, ২ ঘন্টার মতন। শেখার প্রথম ধাপে থাকে নিজের কাজ নিজে করা। জামা কাপড় পড়তে পারা থেকে শুরু করে নিজের খেলনা গোছানো, সকালের নাস্তা তৈরি করা এধরণের নানা কিছু স্কুলে শেখানো হয়।
ডাচ শিক্ষা ব্যবস্থায় মেধা তালিকা বলে কিছু নেই৷ রেজাল্ট কার্ডে লেখা হয় ভালো, যথেষ্ট বা যথেষ্ট নয়। রেজাল্ট কার্ড গণহারে একসাথেও সবাইকে দেয়া হয় না। প্রত্যেক অভিভাবকের সাথে অ্যাপয়েনমেন্ট নিয়ে, তাদের আলাদা করে ডেকে আলোচনা করে রেজাল্ট দেয়া হয়৷ ফলে অভিভাবকদের নিজেদের মধ্যে রেজাল্ট নিয়ে তুলনা করার সুযোগ মিলে না। মোটকথা পরিক্ষার ফল নিয়ে প্রতিযোগীতাকে তারা অসুস্থ সংস্কৃতি বলে মনে করে।
শিক্ষকেরা বাচ্চাদের রিপোর্ট কার্ডও খুব চমৎকার উপায়ে তৈরি করে। রিপোর্ট মূলত তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়৷ সামাজিক উন্নয়ন, মানসিক উন্নয়ন আর পড়াশোনা। ক্লাসে বন্ধুদের প্রতি আচরণ, অন্যদের সাথে ব্যবহার, সাহায্য করার মনোভাব এসব থাকে সামাজিক উন্নয়নের কাতারে। মানসিক উন্নয়নে দেখা হয় বাচ্চারা বয়স অনুযায়ী তাদের অনুভূতি প্রকাশ করছে কিনা। আর সবশেষে পড়াশোনার হালচাল বিচার করা হয় ছাত্ররা তাদের গ্রুপ অনুযায়ী আশানুরূপ ফল করছে কিনা তা দেখে। সবকিছু মিলিয়ে এই বয়সেই বাচ্চা ভবিষ্যতে কোন ধরণের পেশায় যেতে পারে তার দিকনির্দেশনা দেয়া হয়।
নেদারল্যান্ডসে প্রাইমারী শিক্ষা মূলত আট বছরের। স্কুলে ১০ বছরের নিচে বাচ্চাদের কোনো বাড়ীর কাজ দেয়া হয় না। প্রাইমারী স্কুল শেষ করার সময় সরকারী ভাবে একটা বোর্ড এক্সাম নেয়া হয় যেটার নাম হলো সিটো, তাদের ভাষায় (CITO- Central Instituut voor Toets Ontwikkeling)। এই পরিক্ষার ফল আর ক্লাসের ফল দুটাকে একসাথে তুলনা করে সেকেন্ডারী স্কুলের গ্রেড ঠিক করা হয়। এখানে মজার বিষয় হলো কোনো কারণে কোন শিক্ষার্থী যদি সরকারী পরিক্ষায় রেজাল্ট খারাপ করে তাহলে স্কুলের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে। কারণ বাচ্চাটিকে তার শিক্ষকই সবচেয়ে ভালো চিনে। আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে যেটা ভাবাও যায় না! বাচ্চাদের সিটো এক্সামটাও হয় এক অদ্ভুত নিয়মে। সারা দেশে ক্লাস ফাইভের বাচ্চাদের জন্যে সরকারীভাবে প্রশ্ন বিতরণ করা হয়। কিন্তু পরীক্ষা নেয়া হয় ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে। বাড়তি কোনো পড়া বা আড়ম্বরতা থাকে না বিধায় পরিক্ষার কোন চাপ বা ভয় বাচ্চারা অনুভব করতে পারে না। প্রাইমারি শেষে সিটোর ফল অনুযায়ী তাদের সেকেন্ডারি স্কুলে ভর্তি করানো হয়। তবে ভালো গ্রেড পেয়ে সেকেন্ডারিতে গিয়ে যদি লাগাতার পরীক্ষা খারাপ করে তাহলে তাকে মাঝারীতে নামিয়ে দেয়া হয়। আবার মাঝারীর কোন ছাত্র ভালো রেজাল্ট করতে থাকলে তাকে উপরে ওঠার সুযোগ করে দেয়া হয়। এবং এই পদ্ধতি সেকেন্ডারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত চলতে থাকে।
আমার কাছে ওদের যেই জিনিসটা সবথেকে অভিনব লেগেছে তা হলো ক্লাস এইটে উঠার পরই বাচ্চারা কে কোন দিকে পড়তে চায় এটা নিয়ে ভাবার জন্য তাদের ছয় মাস দেয়। কোনো বিষয় খালি ভালো লাগলেই হবে না, ছাত্রটির সে বিষয় পড়তে পারার মতন যোগ্যতা আছে কিনা সেটাও শিক্ষকরা খতিয়ে দেখে। আর এই যোগ্যতা খালি পরিক্ষার ফলের উপর নির্ভর করে না, বাচ্চার মানসিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা সেটাকে সমর্থন করে কিনা তাও দেখা হয়।
আর শুধু আলোচনা করেই যে স্কুলের দায়িত্ব শেষ তা না, দেশ বিদেশের বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও পেশাদারী প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে আয়োজন করা হয় "শিক্ষা মেলা"র। প্রত্যেকটি সাবজেক্টের সিনিয়র ছাত্রছাত্রীরা আলাদা করে বুথ তৈরি করে, তারা যে বিষয়ে পড়ছে বা হাতে কলমে কাজ করছে তার উপর ছোটদের কৌতূহলের উত্তর দেয়। আর যেসব বাচ্চারা তখনও মনস্থির করতে পারেনি কি নিয়ে পড়বে, তাদের নানা বিষয়ে আগ্রহী করে তোলার চেষ্টা করা হয়। বাচ্চাদের ডিটেইল অ্যাড্রেস রাখা হয় পরবর্তীতে বিষয় অনুযায়ী বিভিন্ন তথ্য পাঠানোর জন্য৷ আর এর মধ্যে দিয়ে প্রতিটি বাচ্চা নিজের চাহিদা, সক্ষমতা বুঝে বিষয় ঠিক করার জন্য যথেষ্ট সুযোগ ও সুবিধা পায়। এই পুরো কাজই সরকার করে যায় দেশের স্বার্থে। তাদের মূল মন্ত্র অনেকটা এরকম: পড়াশোনা না পারলে হতাশা দিয়ে জীবন না গড়ে যেটা পারো সেটা করো, টেকনিক্যাল লাইন বা অন্যকিছু। এত বড় জীবন যাতে খালি বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ না হয়ে থাকে।
ডাচদের এই অভিনব শিক্ষা পদ্ধতির জন্য অন্যান্য দেশের মতন "SAT" বা "ACT" পড়ে অমানবিক মানসিক চাপ আর আনুষ্ঠানিক প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হয় না।
সুখী মানুষের দেশ নিয়ে তো অনেকক্ষণ বললাম, এখন চলুন দেখে আসা যাক জাপানে বাচ্চাদের শিক্ষাজীবন কেমন করে কাটে।
জাপানে চাকুরীজীবী মায়েদের জন্য ৩ মাস বয়স থেকেই কিন্ডারগার্ডেনে বাচ্চা রাখার সুবিধা দেয়া থাকে। প্রথমে কয়েকদিন ২ ঘন্টা করে রাখার পর ধীরে ধীরে ৭/৮ ঘন্টা পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়।
জাপানি মানুষদের নিয়মানুবর্তিতা জগত জুড়েই বিখ্যাত। আর এর ভিত্তি শুরু হয় বাচ্চাদের এই কিন্ডারগার্টেন জীবন থেকেই। আমাদের দেশে যেখানে প্লে নার্সারিতে বাচ্চাদের বর্ণমালা মুখস্থ করানো হয়, সেখানে জাপানে শেখানো হয় স্কুল থেকে ফেরার পরে ঘরে ঢুকে জুতা গুছিয়ে রাখা, টিফিন বক্সে খাবার শেষ করে তা বেসিনে রাখা, নিজের জামা নিজে পরা, যেকোনো জায়গায় ময়লা দেখলে তা তুলে ফেলা, দৈনন্দিন নানা কাজের এমন সুশৃঙ্খল উপায় সামাজিক শিক্ষার মাধ্যমে হাতে কলমে শেখানো হয়।
মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানোর হাতেখড়িও শুরু হয় এই বয়স থেকেই। ছোট কাউকে "চান" বা "কুন", বয়স্কদের "সান" বা "সামা", এমনকি যেকোনো ধরণের জড় বস্তু যেমন বিশাল পাহাড় মাউন্ট ফুজিকে সম্মান দিয়ে "ফুজিসামা" বলা হয়। আর এদিকে আমাদের এখানে একটু কম পারিশ্রমিকের পেশাজীবীদের মুরগীওয়ালা, ময়লাওয়ালা বলে ডাকি, আর এতে যে দোষের কিছু আছে এটা ভেবেও দেখা হয় না।
শক্তসাবল করে গড়ে তোলার জন্য কিন্ডারগার্টেনে মজার সব পদ্ধতি নেয়া হয়। যেমন শীতকালে বাচ্চাদের জামা খুলে রোদে বসিয়ে শীত সইতে শেখানো, সিগন্যাল বুঝে রাস্তা পাড় হওয়া, যেকোনো ধরণের সাহায্যের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ, নিজের কাজ নিজে করা, সবাই মিলে একসাথে কাজ করা এসব কিছুতে বেশ গুরুত্ব দেয়া হয়। নজর রাখা হয় কোন কাজে বাচ্চারা যাতে হীনমন্যতায় না ভুগে।
কিন্ডারগার্টেনের শেষ বছরে বাচ্চাদের বয়স যখন পাঁচ তখন তাদেরকে টিচারের সাথে ক্যাম্পিংয়ে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে বাচ্চারা নিজেরাই নিজেদের সব কাজ করার মতন যোগ্যতা রাখে। এরকম নানা স্বনির্ভরতার ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে বাচ্চাদের সাবলম্বী করে গড়ে তোলা হয়।
জাপানে সকল এলাকার স্কুলেই একই মান নিয়ন্ত্রিত করা হয়। তাই ভালো স্কুলের জন্য বাসা থেকে কয়েক মাইল দূরে জ্যাম ঠেলে সময় নষ্ট করতে হয় না।
এখানকার স্কুলে রোল তৈরি করা হয় নামের বানান অনুসারে, রেজাল্ট ভালো হলে যে রোল ১ হবে এমন বৈষম্য তৈরি করা হয় না। প্রাইমারিতে কোনো পরীক্ষা না থাকায় ডাচদের মতন জাপানিজ শিক্ষকরাও রিপোর্ট কার্ড বানায় বাচ্চাদের সামাজিক উন্নয়নের উপর ভিত্তি করে৷ কার্ডে শিক্ষকদের মন্তব্য থাকে বাচ্চারা সামাজিক কিনা, টিমওয়ার্ক করতে পারছে কিনা, শেয়ারিং এ কেমন, কতটা মনোযোগ গিয়ে শিখছে এসব দেখা হয়।
প্রাইমারীর পরেই পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন এক্সটা কারিকুলাম ক্লাস এবং স্পোর্টস ক্লাব শুরু হয়ে যায়। খেলাধুলার পাশাপাশি সাতার, সেলাই, রান্না, এসব ছেলেমেয়ে সবাইকেই শেখানো হয় যাতে করে ঘরের কাজ সবাই সামলাতে পারে৷
বাচ্চাদের প্রথম সেণ্টার পরিক্ষা শুরু হয় জুনিয়র হাইতে উঠে। এই বোর্ডের ফল আর নাইনের ফাইনাল রেজাল্টের উপর ভিত্তি করে তাদের হাইস্কুল ঠিক করা হয়। রেজাল্ট খুব ভালো হলে শিক্ষক প্রথম গ্রেডের একটি সরকারি আরেকটা বেসরকারি স্কুল নির্ধারণ করে দেয় পরীক্ষা দেওয়ার জন্য। রেজাল্ট মোটামুটি ভালো হলে দ্বিতীয় গ্রেডের স্কুল, এভাবে করে এগিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে হাইস্কুল পাশ করে একই উপায়ে নির্ধারিত হয় কোন ইউনিভার্সিটিতে সে পরীক্ষা দিতে পারবে। এছাড়া আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের মতন যাতে সব বিশ্ববিদ্যালয়েই পরীক্ষা দিতে না পারে এজন্য ইউনিভার্সিটির ফি খুব বেশী ধরা হয়। তাদের মতে, শত জায়গায় ভর্তি পরীক্ষা দেয়া শুধু ভোগান্তিই না, পরীক্ষায় বারবার ব্যর্থ হলে ছেলেমেয়েদের মনোবলও সহজে ভেঙ্গে যায়।
এখন যদি এতক্ষণের আলাপ সব একত্র করি তাহলে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠার আগ পর্যন্ত এদুটো দেশের শিক্ষাক্রমে পড়াশোনার পাশাপাশি সামাজিক, মানসিক আর শারীরিক উন্নয়নকে সমান তালে মূল্যায়ন করা হচ্ছে। তাদের প্রাইমারীতে পরীক্ষা বলতে কিছু থাকছে না। একটা বাচ্চার সুস্থ বিকাশে যা যা প্রয়োজন, সব পূরণ করাই হলো এদের শিক্ষার মূল লক্ষ্য।
এখন আশার কথা হলো এই, আমাদের দেশের নতুন শিক্ষাক্রম কিছুটা এমন করার লক্ষ্যে আগাচ্ছে। পিইসি, জেএসসির মতন বোর্ড পরীক্ষাগুলো বাদ দিয়ে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত শিশুদের কোনো পরীক্ষা রাখা হয়নি। এসময় পুরোটা মূল্যায়ন হবে সারা বছর ধরে চলা বিভিন্ন রকমের শিখন কার্যক্রমের ভিত্তিতে। পরবর্তীতে চতুর্থ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঁচটি বিষয়ে কিছু অংশের মূল্যায়ন হবে শিখনকালীন, বাকি অংশের মূল্যায়ন হবে পরীক্ষার ভিত্তিতে। একেবারে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে গিয়ে ৭০ শতাংশ সামষ্টিক ও ৩০ শতাংশ শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে। সামষ্টিক মূল্যায়নে যোগ হবে অ্যাসাইনমেন্ট, উপস্থাপন, যোগাযোগ, হাতে-কলমের কাজ ইত্যাদি বহুমুখী পদ্ধতি। জিপিএ বা গ্রেড পয়েন্ট অ্যাভারেজের ভিত্তিতে যে ফল প্রকাশ হতো, তার বদলে তিন শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে।
সুতরাং কিছু অভিভাবক অভিযোগ করলেও আমার মতে এ সিদ্ধান্ত খুবই সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ। মূল্যায়নের এ ধরণে পরিবর্তন আনার ফলে বাচ্চারা মুখস্থ, পরীক্ষা নির্ভরতা আর পরীক্ষাভীতি এসব থেকে বের হয়ে এসে প্রতিদিনের পড়াশোনাকে বেশি গুরুত্ব দেবে। আর প্রথাগত পরীক্ষা না থাকায় কোচিং ও গাইড বইয়ের প্রয়োজনীয়তাও আর থাকবে না। এখন আমাদের শিক্ষকদের মাধ্যমে এই নতুন শিক্ষাক্রম সকল স্কুলে বাস্তবায়ন করাটাই হলো মূল চ্যালেঞ্জ। আমরা জানি আমাদের শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাকি দেশগুলোর তুলনায় ভয়াবহ রকমের বেশি এবং জাপান বা নেদারল্যান্ডসের মতন হতে গেলে আমাদের সবদিক থেকে নানা সীমাবদ্ধতার মুখোমুখি হতে হবে, কিন্তু এই নতুন শিক্ষাক্রমের জন্য যতটা পরিবর্তন আসছে তাকে সাধুবাদ না জানিয়ে পারি না।
তথ্যসূত্র
১. ( ইয়াসমিন. তানজীনা, হোসেন, তানবীরা, রাহা. রাখাল) ২০২২, তিন ভুবনের শিক্ষা, প্রকাশনা শিশির।
২. https://www.prothomalo.com/education/rklz8dr9jt
আমার একটা বন্ধু আছে IER এ পড়ে, মাঝে মাঝে ওর সাথে কথা হলে বুঝতে পারা যায় কতশত পরিবর্তন আনা বাকি, কতশত চ্যালেঞ্জ সে পথে।
কিছুদিন আগে একটা প্রাইভেট কলেজের শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখলাম বেতন স্কেল যেখানে ১৫-২০ হাজার। আমার বোধগম্য নয় যে এই বেতনে ওনি ক্লাসে কি শিক্ষা দেওয়ার মন মানসিকতা রাখবেন আর কতটুকুই তিনি শিক্ষার্থীদের ওনার প্রাইভেট ব্যাচে না টেনে রাখবেন।
অন্য একটি বিষয় হলো আমাদের বাজে রাজনীতির প্রভাব। বর্তমানে স্কুল পর্যায়েও এই ছাত্র-রাজনীতির বাজে প্রভাবটা দেখতে পাচ্ছি খুব বেশি। রাজনীতির চর্চা ভালো কিন্তু আমাদেরটা খুব বাজে।
আমার এই দুই পয়েন্টের মূল বিষয় হলো, ছোট ছোট পদক্ষেপগুলো খুব সুন্দর কিন্তু এত্ত বাজে পরিস্থিতির পরিবর্তন আনাটা খুবই কঠিন। তাও আশা রাখছি একটা সুন্দর সমাজব্যবস্থার প্রতি।
একদম ঠিক পয়েন্টগুলা নিয়ে আসছিস, আমার ফ্রেন্ডরা ২০ হাজার দিয়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলাতে পড়াচ্ছে।
আমার নিজের বোনই IER এর,ওর টিচারই এই নতুন কারিকুলামের কাজ করলো, প্রায়ই ওর থেকে ইনফরমেশন নিয়ে আপডেট থাকার চেষ্টা করি। এছাড়া আমার সাবজেক্টও এসবের সাথে অনেক রিলেভেন্ট ছিলো, তাই আগ্রহটা শুরু থেকেই আছে।
এখন যে পরিবর্তনটা আসছে এটা তাও কিছুটা ইমপ্লিমেন্ট করা যেতো যদি টিচাররা এই ধরণের পড়া ধরতে পারতো। কিছু ভালো স্কুল ছাড়া অনেক শিক্ষকই বুঝতে পারছে না কিভাবে পড়াতে হবে। আমার পরিচিত যেই স্কুল টিচারকেই জিজ্ঞেসা করছি তাড়া কেউই এর আগামাথা ঠিক করতে পারছে না, কারণ তাদের ট্রেনিং-এর কোনো ব্যবস্থাই করা হয়নি।
এরপরেও ওই তোর মতন আশাবাদী, কারণ কিছুটা হলেও তো ভালোর পথে আগাচ্ছে!
উন্নত বিশ্বের শিক্ষানীতি উন্নত বলেই দেশীয় পরিসরে প্রায় সবগুলো মানদণ্ডে তারা উন্নত। এদেশে শিশু কিশোর ও যুবক শ্রেণির মানুষের জন্য ভাবার মানুষ কম, থাকলেও তারা যা ভাবে আর যা ঘটে - তার মধ্যে বিস্তর ফারাক। এদেশে রাজনীতিবিদ আর অফিসযানচালকরাই ঘটাংঘট, তারা যে ঢোল বাজায়, সে বাদ্যই টারগেট শ্রোতাদের কর্ণপটহ ভেদ করে মস্তিষ্কে বিঁধে যায়।
ঠিক কোন দেশে, প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নির্ধারিত বেতনের চেয়ে ১৫-২০ গুন অর্থ কোচিং বাণিজ্যে অর্জিত হয়, আমার জানা নেই। কোন দেশে চিকিৎসক হয় শিক্ষা খাতের পাক্কা মন্ত্রী, মালুম নেই। কোন দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মারধর করা হয় দুর্বৃত্ত দ্বারা বলতে পারব না।
যদি সিস্টেমের খাতিরে ফেসবুক মনোরঞ্জক ব্যাক্তিত্ব হাউসিয়ান হয়ে শিক্ষিত একটি শ্রেনির স্যার হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়, শেষ সিদ্ধান্ত গ্রাহক হয় - সেক্ষেত্রে শিক্ষাখাত জলাতলে যাবে, সেটা নতুন করে বলতে হয় না।
শিক্ষায় যদি নিজস্ব ধারনা, কৌশল ও ব্যাবহারিক প্রয়োগ না হয়, আর গোঁজামিলের চর্চা বন্ধ না হয়, তাহলে সামনে ভালো কিছু দেখা যায় না।
এ অবস্থার পরিবর্তন হবে, এ দোয়া করি।
কোচিং বাণিজ্য এটা আমাদের দেশের থেকেও বেশি দেখা যায় দক্ষিণ কোরিয়াতে।
https://fb.watch/iE6nk2qrvt/
আপনার পয়েন্টগুলো ছাড়াও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা ভাঙ্গার আরেকটা কারণ হলো প্রাইমারি আর হাইস্কুলের শিক্ষক নিয়োগ ব্যবস্থা। গ্রাজুয়েটরা ভালো কোনো চাকরি না পেলে স্কুলে ঢুকে, যেখানে আমেরিকায় ইউনিভার্সিটির চেয়ে প্রাইমারি শিক্ষকদের বেতন আর সুযোগ সুবিধা বেশি। আমাদেরও যদি স্কুল লেভেলের শিক্ষকদের সুযোগ সুবিধা ভালো থাকতো তাহলে বাচ্চাদের পড়াশোনার বেসিক শুরু থেকেই স্ট্রং হতো। কারিকুলাম বদলায় কি হবে যদি তাদের পড়ানোর যোগ্যতাই না থাকে!
Congratulations @rafa-noor! You have completed the following achievement on the Hive blockchain And have been rewarded with New badge(s)
Your next target is to reach 900 upvotes.
You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOPTo support your work, I also upvoted your post!
Check out our last posts:
Support the HiveBuzz project. Vote for our proposal!
Hi @rafa-noor, your post has been upvoted by @bdcommunity courtesy of @rem-steem!
Support us by voting as a Hive Witness and/or by delegating HIVE POWER.
JOIN US ON