নিরাপত্তা
নিরাপত্তার কথা বলতে গেলে সেটা ব্যক্তিগত জীবনে হোক অথবা আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে হোক, এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই আমরা যারা হাইভে কাজ করছি তাদের জন্য তাদের একাউন্ট অথবা তাদের অর্জিত আয় কিংবা বিনিয়োগকে নিরাপদ করার জন্য নিরাপত্তা বা সিকিউরিটির যে ব্যাপার গুলো রয়েছে সেগুলি সম্বন্ধে সম্যক ধারনা থাকা প্রয়োজন। আজকে এই বিষয়টি আলোকপাত করব। এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি টপিক। কারণ বুঝতে পারছেন বর্তমান সময় এবং ভবিষ্যতের সময়টা হবে পাসওয়ার্ডের যুগ যেখানে মানুষ কেবল মাত্র পাসওয়ার্ড বা ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়েই চলবে। তাই যদি পাসওয়ার্ড হ্যাক হয়ে যায় অথবা আপনার সিকিউরিটি ব্যবস্থা দুর্বল হয় তাহলে আপনার পক্ষে আপনার একাউন্ট রিকভার করা কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে পাশাপাশি আপনি আপনার অর্জিত মূল্যবান সম্পদ হারাতে পারেন। কিংবা যারা এখানে বিনিয়োগ করেছেন তাদের বিনিয়োগের টাকাগুলো সহজেই এখান থেকে যে কেউ চুরি করে নিয়ে যেতে পারে। তাই পাসওয়ার্ড এবং হাইভের একাউন্ট নিরাপত্তা সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয়ে আজকে বর্ণনা করার চেষ্টা করব। শুরু করা যাক…
কী
আমাদের অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা জন্য আমাদেরকে কিছু কী (চাবি) ব্যবহার করতে হয়। যেমন আমরা আমাদের বাড়িতে আমাদের লকার সিস্টেম ঠিক রাখার জন্য বা বাড়ির জন্য চাবি ব্যবহার করি তেমনি এখানে বিভিন্ন কাজের জন্য বিভিন্ন ধরনের কী বা চাবি রয়েছে। প্রথমে কি গুলো সম্বন্ধে একটু ধারণা নিয়ে নেয়া যাক।
কি কি ধরনের কী আছে
আমরা একাউন্ট করার সময় যে পাসওয়ার্ডটি দিয়ে একাউন্ট খুলে থাকি অথবা আমাদেরকে একটা বড় যে মাস্টার পাসওয়ার্ড দেয়া হয় এটিকে বলা হচ্ছে মাস্টার পাসওয়ার্ড (Master Password)।
আমরা একাউন্টে লগইন করার জন্য অনেক সময় Hivesigner ব্যবহার করি সে ক্ষেত্রে আমি নিজে থেকে যে পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করি সেটা হচ্ছে আমার Hivesigner পাসওয়ার্ড।
এছাড়া আরো তিন ধরনের (আগে চার ধরনের) কী আমাদেরকে দেয়া হয়ে থাকে। আর এই কী গুলো আমরা দেখতে পারি আমাদের Wallet ট্যাবে গিয়ে তার মধ্যে Keys and Permission থেকে।
Source: Image by Anja🤗#helpinghands #solidarity#stays healthy🙏 from Pixabay
এখানে এই কী গুলোকে মূলত প্রথমে দুই ভাগে ভাগ করা যায় । একটি হচ্ছে পাবলিক (Public) কী আর অন্যটি হচ্ছে প্রাইভেট (Private) কী। পাবলিক এবং প্রাইভেট কিগুলো কে আবার চারটি ভাগে (বর্তমানে তিন ভাগে) ভাগ করা হয়েছে।
দুই ক্ষেত্রেই এগুলো হলঃ
Posting Key
Active Key
Owner Key
Memo Key
(এই কী এর বর্তমানে তেমন কোন কাজ নেই)
এই চারভাগে ভাগ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে একাউন্টের সিকিউরিটি বাড়ানো অর্থাৎ এক কাজের জন্য একেক কী পারমিশন (অনুমতি) দেয়া আছে অর্থাৎ একটা ছোট কাজের জন্য বড় কী ব্যবহার করার দরকার নেই। ছোট কাজের জন্য ছোট এবং বড় অ্যাকাউন্ট সম্পর্কিত কাজের জন্য আস্তে আস্তে বড় কী ব্যবহার করার জন্য একটা হায়ারার্কি অর্থাৎ ক্রমধারা দেয়া আছে।
পাবলিক কী
পাবলিক কী গুলোর তেমন কোন গুরুত্ব নেই। পাবলিক কী-গুলো কেবলমাত্র ইউজারনেম এবং এর সাথে সংক্রান্ত ব্লকচেইন ট্রানজেকশন দেখার কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। আপনার একাউন্টে লগইন করতে অথবা কোন কাজ করতে এই পাবলিক কী-গুলো দরকার হয়না তাই এগুলো আপনার জন্য কোথাও সংরক্ষণ করে রাখাটা জরুরি নয়। আপনার একাঊন্টের পাবলিক কী সম্পর্কিত তথ্যবলী hiveblocks.com/@yourusername এর Authorities অংশে দেখে নিতে পারেন।
প্রাইভেট কী গুলো
মূলত এগুলোই হচ্ছে আজকের টপিক এর মূল প্রতিপাদ্য বা আলোচ্য বিষয় । আমি বিস্তারিতভাবে এই প্রত্যেকটি কী এবং তার সম্পর্কিত বিষয় গুলো বলার চেষ্টা করছি।
Posting Key (পোস্টিং কী)
এই কেবলমাত্র আমরা যেসব সোশ্যাল কাজ যেমন পোস্টিং, কমেন্টিং, ভোটিং করি সেসব কাজে ব্যবহার করি। এই কী এর অনুমতি এসব কাজ পর্যন্তই। ট্রানজেকশন বা লেনদেন সংক্রান্ত কাজ এই কী দিয়ে করতে পারবেন না। তাই এই কী হ্যাক হলে, তেমন চিন্তার কিছু নেই। তাই আপনি স্বাভাবিক কাজগুলো করার জন্য এই কী যেকোন সাইটে নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারেন।
এই কী দিয়ে যে কাজগুলো করতে পারছেন(Posting Key permissions):
Use your Posting Key to:
• Publish a post or comment
• Edit a post or comment
• Upvote or downvote
• Reblog content
• Follow people
• Mute accounts
source reference
Active Key(একটিভ কী)
এই কী দিয়ে আপনি লেনদেন ও আর্থিক কাজগুলো যেমন এক্সচেঞ্জ, ট্রান্সফার, পাওয়ার আপ ও ডাউন ইত্যাদি করতে পারছেন। তাই এই কী- টি খুব গুরুত্বপূর্ন। সাধারন কাজে এই কী ব্যবহার করা ঠিক হবে না। Wallet সংক্রান্ত কাজে এই কী ব্যবহার করবেন। আর তৃতীয় কোন সাইটে এই কী দেওয়া ও স্টোর করার ক্ষেত্রে দশবার না ভাবলেও ৫ বার ভেবে দিবেন। কারন বুঝতেই পারছেন এই কী যার কাছে যাবে সে মিনিটেই আপনার সব হাইভ ও এইচবিডি নিয়ে নিতে পারবে।
এই কী দিয়ে যে কাজগুলো করতে পারছেন (Active Key permissions):
Use your Active Key to:
• Transfer tokens
• Power HIVE up or down
• HBD conversion
• Vote for witnesses
• Place an order on an exchange
• Certain profile changes
• Publish a Witness price feed
• Create a new user
source reference
Owner Key (মালিকানা কী)
নাম শুনেই বুঝতে পারছেন যে এটা আপনার মালিকানা নিশ্চিত করে। আপনার পুর্বের কী-গুলো হারালে বা চুরি হলে, এই কী এর সাহায্যে আপনি আপনার একাউন্ট পুনরুদ্ধার করতে পারবেন। তাছাড়া অন্য কী-গুলো পরিবর্তন করতে চাইলেও এই কী দরকার হবে। তাই এই কী খুবই গুরুত্বপূর্ন। এটা যে আপনি তা প্রমাণ করে এই কী। তাই এই কী ভুলেও কোন সাইটে ইনপুট দিবেন না যদি না একাউন্ট রিকভারি (পুনরুদ্ধার) এর দরকার হয়।
এই কী দিয়ে যে কাজগুলো করতে পারছেন (Owner Key permissions):
Use your Owner Key to:
• Reset Owner, Active, and Posting keys
• Recover your account
• Decline voting rights
source reference
Memo Key এর তেমন কাজ না থাকায় তা এখানে আলোচনা থেকে বিরত থাকলাম
মাস্টার পাসওয়ার্ড (Master password)
মাস্টার পাসওয়ার্ড হচ্ছে আপনার অ্যাকাউন্টের প্রাণ তাই ভুলেও এই পাসওয়ার্ড কোন সাইটে ব্যবহার করতে যাবেন না। মাস্টার পাসওয়ার্ড যদি আপনি হারিয়ে ফেলেন তাহলে আপনার অ্যাকাউন্ট আপনার পক্ষে রিকভার করা কখনোই সম্ভব হবে না। কারন আপনারা সবাই জানেন এটা হচ্ছে ডিসেন্টালাইজ প্ল্যাটফর্ম তাই এখানে কোন ব্যক্তি পাবেন না যাকে আপনি কমপ্লিট করবেন আপনার একাউন্ট হারিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে। তাই হ্যাক হোক বা হারিয়ে যাক সব ক্ষেত্রেই আপনার জন্য সবচেয়ে প্রটেক্টেড হচ্ছে আপনার মাস্টার পাসওয়ার্ড কে ঠিক ভাবে সংরক্ষন করা। তাই অবশ্যই আপনার মাস্টার পাসওয়ার্ড আপনি সফটকপির বাইরে কোথাও হার্ড কপি অথবা অন্য কোথাও রেখে দিবেন। আমাদের হাইভ সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ করার জন্য মাস্টার পাসওয়ার্ড এর দরকার পড়বে না। উপরে যেসব কী আর কথা বলা আছে সেসব কী কে তার নির্দিষ্ট কাজের জন্য ব্যবহার করলে বিশেষ করে পোস্টিং কী এবং অ্যাক্টিভ কী আর অন্য কোন কী আলাদা করে ব্যবহার করার দরকার পড়বে না। মাস্টার পাসওয়ার্ড একটু বড় আকারে দেয়া হয় এটা এজন্য যে যাতে করে এই পাসওয়ার্ড টা অনেক স্ট্রং থাকে এবং হ্যাকারদের হাত থেকে নিরাপদ রাখা যায়।
আপনার টোকেন নিরাপদ রাখার জন্য যা করতে পারেন
আপনার অর্থ নিরাপদ রাখার জন্য আপনি যে কাজটি সহজেই করতে পারেন সেটা হচ্ছে আপনি আপনার টোকেন গুলো এইচডিডি বা হাইভে না রাখতে পারেন। যদি রাখেন তাহলে হ্যাকার যদি কখনো হ্যাক করতে পারে তাহলে সহজেই যেকোন সময়ে সাথে সাথে ট্রানস্ফার করে এই টোকেন গুলো অন্য কোন একাউন্টে সরিয়ে নিতে পারে। কিন্তু যদি আপনি এইচপি করে রাখেন তাহলে এক সপ্তাহে মাত্র ১৩ ভাগের ১ অংশ লিকুইড টোকন এ কনভার্ট করতে পারবে। তাই আপনার জন্য এটা হচ্ছে সবচেয়ে নিরাপদ যে আপনি এইচপি আকারে রাখুন কারন আপনি এক সপ্তাহের মধ্যে বুঝে যাবেন আপনার অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে কি না।
অথবা আপনি যদি পাওয়ার আপ করতে না চান তাহলে সেভিংস ওয়ালেটে রাখতে পারেন সেক্ষেত্রে তিন দিন সময় লাগবে সেভিং থেকে লিকুইড হাইভ বা এইচবিডি-তে আসতে। অর্থাৎ তিন দিনের মধ্যে যদি আপনার একাউন্টে প্রবেশ করেন তাহলে বুঝে যাবেন আপনার অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে এবং আপনি আপনার মাস্টার পাসওয়ার্ড দিয়ে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
Source: Image by Gino Crescoli from Pixabay
আর আপনি যদি Hivesigner দিয়ে লগ ইন করেন তাহলেও আপনার পাসোয়ার্ড নিরাপদ থাকে কারন হাইভসাইনার আপনার পাসোয়ার্ড বার বার প্রবেশ করানো থেকে বিরত রাখে। এবং আপনাকে প্রথমবার কেবল আপনার পোস্টিং বা একটিভ কী দিতে হবে (প্রয়োজন অনুযায়ী)। আর এই কী গুলো হাইভসাইনার সেভ করে না। তাই ভয়ের তেমন কোন কারন নেই। আপনি একটি সহজ পাসোয়ার্ড ব্যবহার করে সবসময় সহজে হাইভসাইনার দিয়ে আপনার স্বাভাবিক কাজগুলো করে ফেলতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।
শেষকথা
শেষকথা একটাই। একটিভ কী ব্যবহারে সাবধান হোন, আর Owner Key ও Master Password কোথাও কখনো প্রবেশ করাবেন না ও নিজের কাছে একটা হার্ড কপি রাখুন। বিডিকমিউনিটির বাংলা ভাষাভাষী সদস্যবৃন্দ উপকৃত হলেই এই লেখার সার্থকতা। ধন্যবাদ।
হাইভের বেসিক বিষয়ের উপর আমার বাংলায় লেখা কিছু পোস্টঃ
নিচের কোন টপিক সম্বন্ধে জানার প্রয়োজন হলে পড়ে আসতে পারেন।
আমার অভিজ্ঞতা ও নতুনদের জন্য কিছু দিকনির্দেশনা
গতানুগতিক সোশ্যাল মিডিয়ার সাথে হাইভের পার্থক্য
হাইভ থেকে টাকা আয় করার উপায়গুলো কি কি
হাইভে নামের পাশে যে রেপুটেশন (Reputation) দেখায় তা কি, কেন, কীভাবে হিসাব করা হয় ও গুরুত্ব বিস্তারিত
হাইভ (Hive), হাইভ পাওয়ার বা এইচপি (HP) ও এইচবিডি (HBD) নিয়ে বিস্তারিত
হাইভ (Hive), হাইভ পাওয়ার বা এইচপি (HP) ও এইচবিডি (HBD) এর মধ্যে পার্থক্যগত সম্পর্ক
রিসোর্স ক্রেডিট নিয়ে বিস্তারিত যা নতুনদের জানা জরুরী
কীভাবে আপনার পোস্ট ফরমেট করবেন মার্কডাউন দিয়ে– পর্ব ১
কীভাবে আপনার পোস্ট ফরমেট করবেন মার্কডাউন দিয়ে– পর্ব ২
কীভাবে আপনার পোস্ট ফরমেট করবেন মার্কডাউন দিয়ে– পর্ব ৩
কীভাবে আপনার পোস্ট ফরমেট করবেন মার্কডাউন দিয়ে– পর্ব ৪ ও শেষ পর্ব
হাইভে ডাস্ট কি ও কীভাবে তা সেভ করতে পারবেন
আমি কে
আমি বাংলাদেশে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একজন প্রভাষক এবং সদ্য বাবা। আমি আমার চিন্তাভাবনা এবং ধারণাগুলি আমার বন্ধুদের এবং সম্প্রদায়ের সাথে ভাগ করে নিতে ভালোবাসি। ইউটিউব, ডিটিউব, হাইভে ব্লগিং করতে ভালবাসি। আমি শেয়ার করতে চাই ওইসবকিছু যা আমি শিখেছি যাতে মানুয আমার থেকে কিছুটা হলেও উপকৃত হতে পারে। আমি আমার ব্লগে টেক্সটাইল, অনলাইন আয়, ও নানান রকম আকর্ষনীয় বিষয় নিয়ে কথা বলে থাকি। আমি সর্বদা একজন শিক্ষানবিস হিসেবে সবার থেকে শিখতে চাই ও এই কমিঊনিটির সাথে এগিয়ে যেতে চাই।
Upvote, Resteem and Follow me on hive @engrsayful
Find me on social media
Follow me on DTube
Follow me on Youtube
Follow me on ThreeSpeak
Follow me on Facebook
Follow me on Twitter
informative post. It removed many confusion of mine and have given me a clear idea about the keys. Thanks for sharing.
You are most welcome
এতদিন বুঝে না বুঝে কত জায়গায় যে master key না চাইতেই দিয়ে ফেলেছি, মনে মনে ভাবছি মাস্টার মানুষ বলে আমাকে মাস্টার কী দিয়েছে। Lol
এখন আপনার লেখাখানা পড়ে তো টেনশনে পরে গেলাম। সামনে থেকে সতর্ক হবো আশা রাখি।
মাস্টার কী টা আমাকে দেন।
Master Key আমি মাস্টারকে দেন । কিচ্ছু হবে না। LoL
Hi @engrsayful, your post has been upvoted by @bdcommunity courtesy of @rehan12!
Support us by voting as a Hive Witness and/or by delegating HIVE POWER.
JOIN US ON
চমৎকার তথ্যবহুল লেখা, ভালো হইছে ভাই।
ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য
vai, majhe majhe mone hoy apni Hive er official source thekeo beshi clear explanation den............ :)
ধন্যবাদ ভাই