Hive Basics in Bengali : Blockchain and Digital Currency (সহজ ভাষায় ব্লকচেইন ও ডিজিটাল কারেন্সি)

in BDCommunity5 years ago

আবারো হাজির হয়ে গেলাম হাইভের আরেকটি বেসিক টপিক নিয়ে। আজকে সহজভাবে ও উদাহরণ দিয়ে ব্লকচেইন ও ডিজিটাল কারেন্সি (যেমন হাইভ, এইচবিডি, ইত্যাদি) বিষয়টাকে বর্ণনা করব।


1.jpg

ব্লক চেইন কি

এককথায় ব্লকচেইন(Blockchain) হচ্ছে এটা পাবলিক লেজার যাতে সকল ট্রানজেকশন রেকর্ড থাকে। এক্ষেত্রে সকল ধরনের তথ্য বা ডাটা সংরক্ষণ করা হয় একটা বিন্যস্ত ডাটাবেজে অর্থাৎ কোন কেন্দ্রীয় অংশে বা কারো হাতে না। প্রত্যেক লেনদেনের তথ্যগুলো বিন্যস্ত করে সংরক্ষণ করা হয় আর যখনই এই লেজারে নতুন কোন তথ্য আসে তখন এই তথ্যগুলো একেকটা গুচ্ছ আকারে জমা হয়। কিছু ডাটা নিয়ে একটা নির্দিষ্ট সময় (একেক ব্লকচেইনের একেক সময়) পর পর ডাটার গুচ্ছ হয় আর তা গুচ্ছ আকারে এর ব্যবহারকারীদের মাঝে ভাগ হয়ে জমা হয়। এই গুচ্ছকেই বলা হচ্ছে একেকটি ব্লক। নতুন কোন ট্রানজেকশন থেকে যে ব্লক (ডাটা গুচ্ছ) তৈরী হলো সেই ব্লকটি আগের ব্লগের সাথে যুক্ত হয়ে আস্তে আস্তে বড় হয়ে বাড়তে থাকে চেইনের মত করে আর এজন্য একে বলা হয়ে থাকে ব্লকচেইন।

সহজ ভাষায় ব্লক চেইন

ব্লকচেইন আসলে ডাটা বা ট্রানজেকশন রেকর্ড বা সংরক্ষণ এর এমন একটা পদ্ধতি যাতে তথ্য পরিবর্তন, হ্যাকিং, ইত্যাদি করা অসম্ভব বা কঠিন হয়ে পড়ে । ব্লকচেইন এর ডাটা গুলো ডুপ্লিকেট আকারে ব্লকপ্রডিউসার বা ব্লকতৈরিকারীদের কম্পিউটারে সিস্টেমে জমা হয় । একেকটি ব্লকে বেশকিছু ট্রানজেকশন (লেনদেনের বা পোস্টের তথ্য) থাকতে পারে এবং সেটা প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীর কম্পিউটারে যোগ হবে। তাই হ্যাকারদের পক্ষে সবার কম্পিউটার এক্সেস বা হ্যাক করা সম্ভব হয়ে উঠে না। ফলে যদি চেইনের কোন একটা ব্লক পরিবর্তন করা হয় (হ্যাকার বা অন্য কারো দ্বারা) তাহলে সহজেই এটা ধরা পড়া যায়। তাই হ্যাকারদের জন্য এই ব্লকচেইন হ্যাক করতে হলে সমস্ত ব্লক একসাথে পরিবর্তন করতে হবে যেটা সম্ভব হয়ে ওঠেনা কারণ ব্লগগুলো ডিস্ট্রিবিউট করে বিভিন্ন কম্পিউটার সিস্টেমে রাখা হয়েছে। ব্লকচেইন ব্যবহার হতে হতে দিনে দিনে ব্লক তৈরি করতে করতে অনেক ব্লক হয়ে যায় তাই চেইনও বড় হয় ফলে এটা আর হ্যাক করা অসম্ভব হয়ে ওঠে এবং নিরাপদ হয়। আর ওই ব্লকচেইনের ভ্যালু দিন দিন বাড়তে থাকে।

blockchain-3277336_1280.png

source: Image by mmi9 from Pixabay


ব্লকচেইন কেন আসলো

মুদ্রা ব্যবস্থা সম্বন্ধে যাদের ধারণা আছে তারা জানেন, অনেক পর্যায় অতিক্রম করে করে মানুষ আগের বিনিময় প্রথা থেকে পরিবর্তিত হতে হতে বর্তমান মুদ্রাব্যবস্থায় এসেছে। বর্তমান মুদ্রাব্যবস্থার আগেও স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা প্রচলন ছিল। ডিজিটাল কারেন্সি তৈরি করার চেস্টা অনেক আগে থেকেই মানুষের ছিল। বিশেষ করে যখন নাকি মানুষ প্রযুক্তিতে উন্নত হয়েছে তখন ডিজিটাল কারেন্সি তৈরীতে তৎপর হয়েছে।

কিন্তু সমস্যা হল অন্য জায়গায়। যারা ডিজিটাল কারেন্সি তৈরি করবে তাদেরকে বিশ্বাস করাটা একটা বড় ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে কারণ যারা এ কারেন্সি বানাবে তারা নিজেদের ইচ্ছামত অগণিত অসংখ্য কারেন্সি তৈরি করে ফেলবে না এই নিশ্চয়তা মানুষকে দেওয়া দরকার ছিল। অন্যথায় মানুষ এটা গ্রহন করবে না। আবার, অন্যদিকে হ্যাকাররা হ্যাক করে সহজেই সমস্ত কারেন্সি নিয়ে যাবে কিনা এটাও আরেকটা চিন্তার বিষয় ছিল।

তাই এই সমস্যা গুলোর সমাধান কল্পে মানুষকে বিশ্বাস দেয়ার জন্য ডিজিটাল কারেন্সিগুলো নিয়ে আসলো ব্লকচেইন প্রযুক্তি। নরমাল ডাটাবেজে কেউ না কেউ একজন দায়িত্বে থাকে যেটাকে ম্যানেজমেন্ট করে এবং তার পক্ষে এটাতে পরিবর্তন আনা সম্ভব কিন্তু ব্লকচেইন এ যেহেতু একজন ব্যক্তি বিশেষ বা কোম্পানি এটার দায়িত্ব থাকে না বরং যারা এটা ব্যবহার করে (ব্লক প্রডিউসার) তাদের দ্বারাই পরিচালিত হয় তাই এই চেইনে হ্যাক করা কিংবা নিজের ইচ্ছামত কিছু করে ফেলা সম্ভব নয় । আর এ কারণেই এই ডিজিটাল কারেন্সি গুলো মানুষের মধ্যে একটা আস্থা তৈরি করতে পেরেছে। ফলশ্রুতিতে মানুষ এই কারেন্সিতে একটা ভ্যালু দেখতে পেল।

যে কোন কারেন্সির ভ্যালু আসলে কিসের উপর নির্ভর করে? যারা মুদ্রা ব্যবস্থা বুঝেন তারা এটা জানেন যে, কোন দেশ কেবল কারেন্সি (কিছু ক্ষেত্রে সংস্থা যেমন আইএমএফ) ছাড়ে এবং তা মানুষ ভ্যালু হিসেবে গ্রহনও করছে। একটা কাগজ দিলেন (১০০০ টাকা) আর এটা দিয়ে ২০ কেজি চাল পেয়ে গেলেন। ২০ কেজি চালের দাম ও একটা কাগজের দাম সমান হয়ে গেল! এখানে কাগজটির ভ্যালু আছে বা মানুষ মূল্য দিচ্ছে।

euro-3479899_1920.jpg

source: Image by mohamed Hassan from Pixabay


আর যখনই কোন কারেন্সির ভ্যালু থাকে তখনই আমরা সেটাকে আমাদের বিনিময়ের মাধ্যম বা দৈনন্দিন ব্যবহারের কাজে ব্যবহার করে থাকি। যেমন উদাহরণস্বরূপ আজকে ভারত দেশ আছে এবং সরকার আছে তাই এই সরকার কিছু কাগজ ছাপিয়ে তার গায়ে রুপি লিখে বলে দিচ্ছে এটার মুল্যমান ১০০০ রুপি। সার্বভৌমত্ত আছে, বিদেশের সাথে বাণিজ্য আছে, আছে সরকার, আছে দেশ তাই তার কথায় আজ শুধু ভারতে নয় বরং সারা বিশ্বে একটি কাগজ ১০০০ রুপির মূল্য রাখছে। যদি কখনো এমন হয় যে, এই দেশের সার্বভৌমত্ব না থাকে বা যারা এই টাকাটা ছাপানো কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের কর্তৃত্ব না থাকে তাহলে তাদের যে অর্ডার এই কাগজের মধ্যে বলা আছে যে এটার মুল্যমান ১০০০ রুপি থেকে ০০ হয়ে যাবে। আপনি একটা কাগজ ছাপিয়ে যদি বলেন এর দাম ১ টাকা তাও কেউ গ্রহন করবে না। অর্থাৎ কোন একটা মুদ্রার ভ্যালু ততক্ষণ পর্যন্তই আছে যতক্ষণ পর্যন্ত এই মুদ্রা যারা তৈরি করেছে তারা যতক্ষণ খবরদারি করতে পারবে। আর এই খবরদারী ততদিনই টিকবে যতদিন মানুষ এর মধ্যে ভ্যালু খুজে পাবে বা তাদেরকে মানবে বা আস্থা পাবে। তাই আমরা দেখেছি জিম্বাবুয়েসহ বিভিন্ন দেশে সরকার তার মুদ্রাব্যবস্থার পরিবর্তন করতে হয়েছে কারণ সে কাগজের গায়ে 100 টাকা বলে দিলো সেটা মানুষ গ্রহণ করতে পারছে না কারণ তার কর্তৃত্ব নেই এবং ইচ্ছামত কাগজ ছাপিয়ে নিয়েছে।


ব্লকচেইন ও ডিজিটাল কারেন্সি

আপনি যখনই একটা মুদ্রা ছাপিয়ে বা ডিজিটাল কারেন্সি ডিজিটালি নিয়ে এসে বলবেন এর দাম এত তখন আপনাকে আস্থা অর্জন করতে হবে যাতে মানুষ এর মধ্যে ভ্যালু খুজে পায়। মানুষের মাঝে ভ্যালু বা আস্থা আনতে পারলেই কেবল সেটাকে মানুষ কারেন্সি হিসেবে, বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে অথবা কেনাবেচার জন্য ব্যবহার করবে। যেহেতু ব্লকচেইন টেকনোলজিতে তৈরি করা ডিজিটাল কারেন্সি গুলো কোন সরকার বা রাষ্ট্রের মাধ্যমে নয়। তাই ব্লকচেইন টেকনোলজির মাধ্যমে তারা সেই আস্থা বা ভ্যালু এড করছে। এটা নিশ্চিত করছে যে, এই মুদ্রা ব্যবস্থায় কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা, চুরি, হ্যাকিং করা যাবে না আর এ কারণেই ডিজিটাল মুদ্রা ব্যবস্থা গুলা দিনে দিনে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তবে একথা সত্য একটা মুদ্রা ততক্ষণ পর্যন্তই মানুষ গ্রহণ করবে যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ এই মুদ্রার কিছু-না-কিছু মূল্য পাওয়ার মত বেকাপ (যেমন সরকার বা ব্লকচেইন) পাবে সেটা নরমাল কারেন্সি হোক বা ডিজিটাল কারেন্সি।

ব্লকচেইন ব্যবস্থার ব্লগ প্রডিউস হওয়ার মাধ্যমে ট্রানজেকশন সম্পন্ন হয় বলে এই ট্রানজেকশন ব্যবস্থাটি অনেক নিরাপত্তা বেস্টিত। যেমন উদাহরণ স্বরূপ ধরুন গ্রামীন ফোন তাদের কাস্টমারের কল লগ বা ডাটা একটা এক্সেল ফাইলে স্টোর করে। হ্যাকার পেলে এক্সেল ফাইল টাতেই হাত দিয়ে ক্ষতি করতে পারবে। একজনের টাকা আরেকজনের একাউন্টে দেখাতে পারবে। কিন্তু ব্লকচেইন ব্যবস্থায় হলে কিছু কল রেকর্ড ডাটা মিলে একটা ব্লক হয়ে ধরুন ১০০ জনের কম্পিউটারে জমা হবে। আর এভাবে কল বাড়তে থাকলে ব্লক বাড়তে থাকবে আর আপনার পক্ষে আস্তে আস্তে হ্যাকিং টা দুরহ হতেই থাকবে কারন নিচের ডাটা তুলে আনা আর একসাথে সব কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ নেয়া, যা আবার গুচ্ছ হয়ে বিন্যস্ত হয়ে গিয়েছে। আপনি ধরুন ১,০০,০০০ টি বল এর চেইন থেকে সবচেয়ে নিচের বল টি খুলতে হলে আগের ৯৯,০০০ টি বল- কে চেইন থেকে খুলে শেষ বল-টি খুজে বের করার মত অবস্থা।

ডিজিটাল কারেন্সি বিনিময়ের জন্য বা কেনাবেচা করার জন্য খুব সহজেই ট্রানজেকশন টা সম্পন্য করা যায় কোন ধরনের অতিরিক্ত ফি ছাড়াই। আর এতে করে এটা মানুষের এই ডিজিটাল যুগে বিনিময়ের ও লেনদেনের একটা গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে দাঁড়াচ্ছে এবং যারা ব্লগ তৈরি করছে তারা এখান থেকে ট্রানজেকশন এক্সিকিড এর মাধ্যমে তাদের কাজের জন্য মুনাফা পেয়ে যাচ্ছে।

currency-2071287_1920.jpg

source: Image by Peggy und Marco Lachmann-Anke from Pixabay


শেষকথা

হাইভ ব্লকচেইন টা অন্য অনেক ব্লকচেইন থেকে অনেক আলাদা ও কিছু মজার ব্যাপার আছে। এটা নিয়ে অন্য একদিন লিখব আমার এই বেসিক সিরিজে। আজকের মত এ পর্যন্তই। আমার খুদ্র জ্ঞান থেকে বুঝানোর চেস্টা করেছি। জানিনা কতটা পেরেছি। ভুল হলে শুধরে দিবেন। আমি সবজান্তা বা ভুলেই উর্ধে নই।



হাইভের বেসিক বিষয়ের উপর আমার বাংলায় লেখা কিছু পোস্টঃ

নিচের কোন টপিক সম্বন্ধে জানার প্রয়োজন হলে পড়ে আসতে পারেন।

আমার অভিজ্ঞতা ও নতুনদের জন্য কিছু দিকনির্দেশনা

গতানুগতিক সোশ্যাল মিডিয়ার সাথে হাইভের পার্থক্য

হাইভ থেকে টাকা আয় করার উপায়গুলো কি কি

হাইভ একাউন্টের নিরাপত্তা সংক্রান্ত যাবতীয় কী(Key) এর খুটিনাটি

হাইভে নামের পাশে যে রেপুটেশন (Reputation) দেখায় তা কি, কেন, কীভাবে হিসাব করা হয় ও গুরুত্ব বিস্তারিত

হাইভ (Hive), হাইভ পাওয়ার বা এইচপি (HP) ও এইচবিডি (HBD) নিয়ে বিস্তারিত

হাইভ (Hive), হাইভ পাওয়ার বা এইচপি (HP) ও এইচবিডি (HBD) এর মধ্যে পার্থক্যগত সম্পর্ক

রিসোর্স ক্রেডিট নিয়ে বিস্তারিত যা নতুনদের জানা জরুরী

কীভাবে আপনার পোস্ট ফরমেট করবেন মার্কডাউন দিয়ে– পর্ব ১

কীভাবে আপনার পোস্ট ফরমেট করবেন মার্কডাউন দিয়ে– পর্ব ২

কীভাবে আপনার পোস্ট ফরমেট করবেন মার্কডাউন দিয়ে– পর্ব ৩

কীভাবে আপনার পোস্ট ফরমেট করবেন মার্কডাউন দিয়ে– পর্ব ৪ ও শেষ পর্ব

ডেলিগেশন কি ও বিস্তারিত

ভোটিং পাওয়ার ও এর হিসাব নিকাশ

হাইভে ডাস্ট কি ও কীভাবে তা সেভ করতে পারবেন

আমি কে




আমি বাংলাদেশে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একজন প্রভাষক এবং সদ্য বাবা। আমি আমার চিন্তাভাবনা এবং ধারণাগুলি আমার বন্ধুদের এবং সম্প্রদায়ের সাথে ভাগ করে নিতে ভালোবাসি। ইউটিউব, ডিটিউব, হাইভে ব্লগিং করতে ভালবাসি। আমি শেয়ার করতে চাই ওইসবকিছু যা আমি শিখেছি যাতে মানুয আমার থেকে কিছুটা হলেও উপকৃত হতে পারে। আমি আমার ব্লগে টেক্সটাইল, অনলাইন আয়, ও নানান রকম আকর্ষনীয় বিষয় নিয়ে কথা বলে থাকি। আমি সর্বদা একজন শিক্ষানবিস হিসেবে সবার থেকে শিখতে চাই ও এই কমিঊনিটির সাথে এগিয়ে যেতে চাই।


zxddz4gt63.gif

Upvote, Resteem and Follow me on hive @engrsayful


Find me on social media

Follow me on DTube
Follow me on Youtube
Follow me on ThreeSpeak
Follow me on Facebook
Follow me on Twitter

Sort:  

Very informative article. Keep up your great job.

Thanks bro

খুব সুন্দর পোস্ট লিখেছেন ভাইয়া। অনেক প্রশ্নের জবাব পাইলাম। বিশেষ করে আমার জন্য অনেক সহজ হল বুঝতে আমি নতুন। আপনাদের মাধ্যমেই শেখার আছে বহুদুর পথ।

শালাবাবু ভাইয়ের বাকি টিউটোরিয়াল পোস্ট গুলোও সময় করে ধীরে ধীরে পড়লে অনেক কিছু জানতে পারবা।

আপনি উপকৃত হয়েছেন জেনে ভাল লাগল